ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে মামলার রেকর্ড ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি না হওয়ার পরেও এক ব্যাক্তিকে আটক করে মোটা অংকের ঘুষ দাবির অভিযোগে পুলিশের এস আই আইয়ুব আলীকে কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়ী থানার ওসি তদন্ত নাজমুস সাকিব সজীব। তিনি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ৩ অক্টোবর রাতে তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।
জানা গেছে, এসআই আইয়ুব আলী ফুলবাড়ী থানায় যোগদানের পর থেকে উপজেলার সাধারণ জনগণকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠতে থাকে। তিনি উপজেলার বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষের উপর অহেতুক হয়রানি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় ও দাবি করে আসছিলেন।
সর্বশেষ ঘটনা উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের তালুক শিমুলবাড়ি এলাকার (ভুরিয়ার কুটি) গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে মো. মজিদুল হক (৫০) এর সাথে তার আপন মামা মো. বছির উদ্দিনের পারিবারিক কলহের জের ধরে মামা মো. বছির উদ্দিন গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভাগিনা মজিদুলের নামে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মীমাংসা করবে বলে থানায় ডেকে নিয়ে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন এস আই আইয়ুব আলী। পরে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ছয় হাজার টাকা রফা হলে তাকে গভীর রাতে ছেড়ে দেয়া হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর আবার মীমাংসার লক্ষ্যে মজিদুলসহ তার আরও দুই ভাইকে ডেকে এনে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন এস আই আইয়ুব আলী। টাকা না দিলে মামলা দিয়ে চালান করে দেওয়ার হুমকিও দেন তিনি। পরে বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে মীমাংসা করার সিদ্ধান্ত হলে গভীর রাতে ছেড়ে দেয়া হয় তাদের। তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে বিভিন্ন সময় বিবাদীকে ফোন করে টাকা দাবি করেন এস আই, কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় আবার ৩ অক্টোবর সকালে মজিদুলকে জুম্মার পাড় নামক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে এসে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করেন এস আই আইয়ুব আলী। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে চালান করিয়ে দেবেন বলে থানা হাজতে রাত আটটা পর্যন্ত আটকে রাখেন।
বিষয়টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী সরকারকে অবগত করলে তিনি নিজেই অভিযুক্ত এস আই আইয়ুব আলীকে মোবাইল ফোনে মজিদুলকে তুলে আনার বিষয়টি জানতে চান। উত্তরে এস আই আইয়ুব আলী বলেন, সে এজাহার ভুক্ত আসামি। সেই কারণে তাকে তুলে আনা হয়েছে। কিন্তু সারাদিন গিয়ে রাত আটটা অবধি তাকে চালান না দেয়ার খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই অফিসার ইনচার্জের রুমে গিয়ে মামলার কপি চেয়ে চ্যালেঞ্জ করেন। এ সময় মামলা নম্বর কিংবা মামলার কপি দেখাতে পারেনি থানা পুলিশ। পরে এই ঘটনা জানাজানি হলে এস আই আইয়ুব আলীকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।
শিমুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল আলম সোহেল জানান, এতদিন জেনেছি পুলিশেই জনতা, জনতাই পুলিশ। কিন্তু এস আই আইয়ুব আলী তার ব্যতিক্রম। তিনি অন্যায়ভাবে আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা মজিদুল হককে থানা হেফাজতে ১৪ ঘণ্টা আটকে রেখেছেন।
শিমুল বাড়ি ইউনিয়নের মহিলা সদস্যা মোছা. লায়লা বেগম জানান, তিনি আমার নিকট ইতিপূর্বে মজিদুলের বিষয়ে মামলা হবে না মর্মে ছয় হাজার টাকা ঘুষ নেন। আবারও মঙ্গলবার তাকে অবৈধভাবে ধরে নিয়ে এসে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার জানান, ক্ষমতার অপব্যবহার করে একজন গরীব অসহায় মানুষকে কোনো কারণ ছাড়াই থানায় ১৪ ঘণ্টা আটক করে রাখা হয়েছে এবং আমার সঙ্গে অসৌজন্য মূলক আচরণ করা হয়েছে। আমি বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available