রাজু আহমেদ, বগুড়া: আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে বগুড়ায় শুরু হয়েছে পোড়াদহ মেলা। পোড়াদহের এই মেলা একদিনের মেলা হলেও চলে সপ্তাহ ধরে। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ইছামতি নদী সংলগ্ন মাঠে প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার ঐতিহ্যবাহী এই মেলার আয়োজন হয়। গাবতলীর পোড়াদহ সহ আশপাশের ৪টি উপজেলার প্রায় ২শ গ্রামে দুমাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, বগুড়ার গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী এই পোড়াদহ মেলা সাড়ে ৪শ’ বছর আগ থেকে হয়ে আসছে। ‘সন্যাসির মেলা দিয়ে শুরু হয়ে পোড়াদহ মেলা কালের বিবর্তনে এখন বলা হয় মাছের মেলা। এলাকায় প্রসিদ্ধ জামাই মেলা বলে। মেলাকে ঘিরে ঘরে ঘরে চলে জামাই বরণের পালা। ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনি আর আত্মীয়-স্বজন নিয়ে উৎসবের ধুম পড়ে বগুড়ার গাবতলী, সারিয়াকান্দি, শাজাহানপুর ও ধুনটসহ ৪ উপজেলায়। মেলায় এবার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ৪০ কেজি ওজনের সামুদ্রিক পাখি মাছ ও ১২ কেজি ওজনের মাছ মিষ্টি। তবে মেলায় রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, বিগ্রেড, কালবাউস, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সমাহার ছিল দেখার মত।
চোখ জুড়ানো হরেক রকম মাছ। আবার মাছের আদলেই মন ভোলানো বিশাল বিশাল মিষ্টি, রকমারি ফার্নিচার আর সংসারের টুকিটাকি পণ্য সাজিয়ে বসেছেন বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলার দোকানীরা। ১৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার ভোর থেকে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন মেলায়। ৪০ কেজি ওজনের পাখি মাছ যার দাম হাঁকা হচ্ছে ৮০ হাজার টাকা। মেলায় বিভিন্ন প্রসাধনীর দোকানসহ ছিল হরেক পদের মিঠাই-মিষ্টান্নের দোকান। এ ছাড়া চটপটি-ফুচকা থেকে মুখরোচক নানা পদের খাবারের দোকান ছিল। বিনোদনের জন্য ছিল সার্কাস, নৌকা খেলা, কার খেলা, যাদু, নাগোরদোলা, চরকি, দোলনা, কুপে হোন্ডা চালনা, পুতুল নাচ ও ভেলকীবাজিসহ নানা আয়োজন।
এছাড়া কাঠ ও স্টিলের খাট পালংসহ বিভিন্ন ধরনের তৈজস পত্র ছিল মেলার অন্যতম আকর্ষণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। মেলা উপলক্ষে এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এ উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের বিবাহিত নারীরা বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এ ছাড়া তাদের আত্মীয়-স্বজনকেও বাড়িতে নিমন্ত্রণ করা হয়।
লাখো মানুষের পদচারণায় মেলা উৎসবমুখর হয়ে উঠে। মেলার মূল আকর্ষণ ছিল বড় বড় বাঘাইড় মাছ। কিন্তু গতবছর থেকে মেলায় বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যার কারণে মেলায় আর বাঘাইড় মাছ উঠেনি এবার। তবে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে বড় বাঘাইড় মাছ দেখা গেছে।
মেলায় আগত সাংবাদিক মাহমুদুল আলম নয়ন জানান, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ছোট ছেলেকে মেলায় নিয়ে এসেছি। এবারের মেলা গতবারের মেলার চেয়ে ভালো লেগেছে।’
আবু তাহের নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী জানালেন, ‘আমি বগুড়ার জামাই তাই মেলায় এসেছি। প্রতিবছরই মেলায় আসার চেষ্টা করি। এবার মেলায় মাছের দাম একটু বেশি। আমি দুটো মাছ কিনেছি, একটি ৬শ’ টাকা কেজি দরে কিনেছি, অন্যটি এক হাজার টাকা ধরে কিনেছি।’
মিষ্টি বিক্রেতা মুঞ্জরুল হক জানান, ‘আমাদের এখানে মূল আকর্ষণ হচ্ছে মাছ আকৃতির বিভিন্ন সাইজের মিষ্টি। আমি ১ কেজি থেকে ১০ কেজি, ২০ কেজি ওজনের মিষ্টি নিয়ে এসেছি। বিক্রিও ভালো হচ্ছে।’
গাবতলী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available