সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুরে সরকারি ঘর পেতে অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভূমিহীন এক বৃদ্ধ দম্পত্তি। নিজের কোন জমি না থাকায় অন্যের জমিতে পলিথিন ও চটের ঘেরায় ঝুপরি ঘর বানিয়ে দিন কাটছে নববিবাহিত শহিদুল ও তহুরা নামে এক বৃদ্ধা দম্পত্তির। বর্তমানে ওই জায়গাটিও ছেড়ে দেয়ার তাগাদা দেয়ায় দিশেহারা হয়ে পরেছেন তারা।
ভূমিহীন শিহিদুল ইসলামের কষ্টের জীবন:
সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের সোনাখুলি গ্রাম। আর ওই গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম। বর্তমানে বৃদ্ধ ইসলামের বয়স চলছে ৭৫ বছর।
তার কোন পৈত্রিক সম্পত্তি না থাকায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে অন্যের জমিতে কেটেছে সংসার জীবন। এক পুত্র সন্তান রেখে প্রথম স্ত্রী হঠাৎ মারা যান। তার মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে সফিকুল ইসলাম বিয়ে করে বাবাকে ছেড়ে তার শ্বশুড় বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এদিকে বৃদ্ধ বাবার আয় নেই, থাকার ঘর নেই আর নেই কোন আপনজনও।
শহিদুলের একাকিত্ব জীবনের সঙ্গী হলেন তহুরা:
এ অবস্থায় বড় একাকিত্ব জীবনের সাথি হন তহুরা বেগম (৫৬) নামের আর এক অসহায় নারী। সেও ছিল বড়ই অসহায়। স্বামীর সংসারে ঠিকমত খাবার জুটতনা তহুরা বেগমের। এর প্রতিবাদ করলে মিলতো শুধু নির্যাতন। তাই স্বামীর ঘর ছেড়ে একমাত্র মেয়ে তাসমিরাকে সাথে নিয়ে আশ্রয় নেন বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়ার মামার বাড়িতে।
তাদের দু’জনের যেভাবে পরিচয় হলো:
একই এলাকা হওয়ায় সুবাধে পরিচয় মিলে দুজনের। শেষে মেয়ের মামার সাথে যোগাযোগ করে শহিদুল ইসলাম। একপর্যায়ে বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হয় তহুরা বেগম। বিয়ের পর গত বছর তারা আশ্রয় নেয় পুরাতন পোড়ার হাট এলাকার সড়কের ধারে অন্যের জমিতে। সেখানে কয়েকটি টিন, পলিথিন ও চটের ঘেরা দিয়ে ঘর বানিয়ে শুরু করেন নতুন সংসার জীবন।
কী কর্ম করছেন বৃদ্ধ এই অসহায় দম্পতি:
কর্ম হিসাবে বেঁচে নেন পথের মোড়ে, হাটে, রাস্তায় পড়ে থাকা বোতল ও পলিথিন কুড়ানোর কাজ। এবারের কনকনে ঠান্ডায় ও প্রচন্ড শীতে তারা উভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন বিছানায়। পারছেন না কোন কাজ করতে। তাই একমাত্র ছোট শিশুকে নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাদের।
শুনে আসা যাক বৃদ্ধ শহিদুল ইসলামের বক্তব্য:
আমার চারপাশে সরকারি ঘর হচ্ছে। অনেকে ওই ঘর পেয়েছেন। কিন্তু আমার ভাগ্যে একটি ঘরও মেলেনি। আমি অন্যের জমিতে পলিথিন মোড়ানো একটি ঝুপরি ঘরে আছি। জমির মালিক সেটিও ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এখন কোথায় যাব? কি করবো? তা ভেবে পাচ্ছি না। সরকারিভাবে একটু মাথা গোজার ঠাঁই পেলে অন্তত মরেও শান্তি পেতাম। এটি না হলে পথে পথে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতে হবে।
কী বলছেন স্ত্রী তহুরা বেগম:
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর, সামর্থবানরাও পেয়েছেন। অথচ আমার মতো হতভাগীর ভাগ্যে একটা ঘর জোটে না। ইউএনও ফয়সাল রায়হান স্যারকে বলেছিলাম। তিনি ঘর দিবেন এমন বলেছিলেন । কিন্তু হঠাৎ করে তিনিও বদলি হয়ে চলে যান। আমার অভাগার ভাগ্যে আর ঘর জুটলো না। তবুও আশায় আছি, নিশ্চয়ই একদিন আমি একটি ঘর পাবো।
যে আশা দিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা:
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, আমি নতুন এসেছি। তাছাড়া যারা ভূমিহীন তারাই তো সরকারি ঘর পাবেন। যদি ওই ব্যক্তি সত্যিকার ভূমিহীন হয়ে থাকেন, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available