শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীরা। তিনি বছরের পর বছর অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোসহ জরুরি কাগজপত্র সংশোধনেও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিলেন।
গত ৫ই আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তার পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করেছেন তারা। আর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের তার অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, মফিজুল ইসলাম ও পরিবারের লোকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিগত দিনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় কোনো কিছুই পাত্তা দেননি তিনি। বিদ্যালয়টির তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মানিক। তারই ছত্রছায়ায় প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির করে আসছিলেন।
প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের সাধারণত এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। কিন্তু প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হতো। ওই প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে ৮/১০ হাজার টাকার বিনিমযে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা করে দিতেন। তাছাড়া, কোনো শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন, প্রবেশপত্র, মার্কশিট ও সার্টিফিকেটে নামসহ অন্যান্য ভুলক্রুটি থাকলে তা সংশোধনের জন্য হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা। এতোদিন কেউ তার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে হেনস্থা ও হয়রানির শিকার হতে হতো।
ভুক্তভোগি শিক্ষার্থী রাব্বি হোসেন অভিযোগ করেন, ‘২০২৩ সালে আমি প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হই্। এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলে আমার কাছে প্রধান শিক্ষক প্রথমে ৫ হাজার টাকা নেন। এরপর আমার বাবাকে ডেকে নিয়ে আরও ৫ হাজার নেন। পরে এ বিষয়ে নিয়ে একটু জানাজানি হলে ৩ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার কথা বললেও পরে তা দেননি।’
ভুক্তভোগি আরেক শিক্ষার্থী মিন্টু অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হই। ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলে আমার কাছে প্রধান শিক্ষক ১০ হাজার টাকা দাবি করে প্রথমে ৫ হাজার টাকা নেন। এরপর বাকি ৫ হাজার টাকা না দেয়ায় আমাকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেননি।
একই সালে তানজিলুর ও বিপ্লব প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও টাকার বিনিময়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। আর টাকা না দেয়ায় শ্রাবণকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেননি। তাছাড়া অনেক শিক্ষার্থীর কাগজপত্রে ভুল সংশোধনের জন্য নানা অজুহাতে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেছেন প্রধান শিক্ষক। এই বিষয়ে আমার ১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিভাবে অভিযোগ করেছি।’
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন দাবি করে যমুনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মফিজুর রহমান জানান, বিদ্যায়টির সভাপতি আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। তবে, রাজনৈতিক কোনো প্রভাব বিদ্যালয়ে বিস্তার করা হয়নি। আর অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কিছু কুচক্রি মহল তার পেছনে লেগে এসব অপপ্রচার করছেন বলে অভিযোগও করেন তিনি।
এ ব্যাপারে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। আগামী সাতদিনের মধ্যে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available