জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাট জেলার কালাই পৌর এলাকার অঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির তালিকা থাকা শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেলেও প্রধান শিক্ষক তাদের টাকা তুলে যাচ্ছেন। সম্প্রতি অভিভাবকের পক্ষ থেকে সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন জাহাঙ্গির হোসেন নামে এক অভিভাবক।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ২৪৩ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পায়। তারা নগদ, বিকাশ অ্যাকাউন্ট ও সিটি ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করে।
স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কালাই উপজেলার আঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয় (ইআইআইএন-১২১৯১২) এর প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফা দীর্ঘদিন যাবৎ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির মাধ্যমে প্রাপ্ত উপবৃত্তির টাকা নিজের পছন্দের একাধিক মোবাইল নম্বর শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির তালিকায় সংযুক্ত করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। ফলে গ্রামীণ জনপদের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক তথ্য গোপন করে বিবাহ হওয়া ও স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। এমন ১০ জন শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। এই ১০ জন শিক্ষার্থীর টাকা আত্মসাৎ করার তালিকা পাওয়া গেলেও বাস্তবে প্রধান শিক্ষক আরও অনেকের নামে টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে তিনি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করায় অভিভাবকের তোপের মুখে পড়েন। এ অবস্থায় স্কুলের (কেরানি) মামুনের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের মাঠে থাকা ফুটবল খেলার একটি বার বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে প্রতিবাদের ঝড় উঠে।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, আঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে কিছু জমি গোপনে বিক্রি করে প্রধান শিক্ষক। স্কুলের আরও কিছু জমি বিক্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিক ব্যক্তির থেকে অর্থ নিয়েছে কিন্তু, জমিটি রেজিস্ট্রি না করে দিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা করছে। বিদ্যালয়ে আয়া পদে চাকুরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে একাধিক ব্যক্তির নিকট হইতে টাকা নিয়ে অন্য একজনকে চাকুরি দিয়েছে। এতে বিদ্যালয়ের স্বার্থ ও উন্নয়ন খর্ব হয়েছে, যা একটি প্রতিষ্ঠানে মোটেও কাম্য নহে।
৭ম শ্রেণীর ছাত্রের অভিভাবক মোছা. মোহসিনা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ২৩-২৪ সালের সরকারি উপবৃত্তির তালিকায় আমার ছেলের নাম থাকলেও প্রধান শিক্ষক তার পছন্দের নগদ অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিয়েছে উপবৃত্তির তালিকায়। এ কারণে নাম থাকা সত্ত্বেও আমরা উপবৃত্তির টাকা পাই না।
স্থানীয় গ্রামবাসী মো. কাইমুদ্দিন আকন্দ বলেন, স্কুলের কেরানি মামুনের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের মাঠে খেলার বার বিক্রি করে সকল শিক্ষক স্টাফ মিলে খিচুড়ি রান্না করে খায়।
স্থানীয় গ্রামবাসী ও ছাত্রের অভিভাবক জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, আমার স্ত্রী মোছা. রিক্তা বেগম স্কুলের আয়া পদে চাকুরির জন্য প্রধান শিক্ষক আমার কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নেয়। পরবর্তীতে আমার স্ত্রীকে চাকুরি না দিয়ে টাকার বিনিময়ে অন্যকে চাকুরি দেন।
অঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার নিজস্ব কোন নগদ অ্যাকাউন্ট নেই। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট (উপবৃত্তি) এর তালিকার অনেক ছাত্র অন্য স্কুলে চলে গেছে যার কারণে তাদের নাম শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট (উপবৃত্তি) তালিকায় আছে। সংশোধনী আসলে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হবে। রিক্তা বেগমের কোনো সার্টিফিকেট না থাকায় তাকে চাকরি দেয়া হয়নি। চাকুরির বিনিময়ে কারো থেকে কোনো টাকা নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মনোয়ারুল হাসান বলেন, অঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের উপবৃত্তির টাকা ও বিদ্যালয়ের জমি বিক্রয়ের অর্থ আত্মসাতের একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available