কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চিকিৎসকের অবহেলায় বৃষ্টি খাতুন (২৫) ও মর্জিনা খাতুন (২৭) নামের ২ প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল মালিকসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
২৩ আগস্ট শুক্রবার রাতে বৃষ্টির বাবা সাইফুল শেখ বাদী হয়ে নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বদর উদ্দিনের নামে মামলা দায়ের করেন। তবে মামলার আসামি কাউকে এখনও গ্রেফতার করতে পারিনি পুলিশ।
মামলার তথ্য নিশ্চিত করে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম জানান, নিহত বৃষ্টির বাবা বাদি হয়ে ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। আসামি গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।
নিহতরা হলেন - উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের যদুবয়রা গ্রামের রিপন শেখের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২৫)। তাকে বৃহস্পতিবার বিকেলে নোভা ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রপাচারে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওইদিন রাত ৩টার দিকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বিকেলে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। আর রাতে বাবা সাইফুল শেখ চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করেন।
অপরজন নন্দলালপুর ইউনিয়নের বেলঘোড়িয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে মর্জিনা খাতুন (২৭)। তিনি ১৮ আগস্ট রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। ১৯ আগস্ট ময়নাতদন্ত ছাড়াই সামাজিক কবরস্থানে মরদেহটি দাফন করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে শুক্রবার দুপুরে বৃষ্টির মরদেহ নিয়ে নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘেরাও করে নিহতের স্বজন ওবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রজনতা। পরে খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত। এ সময় কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. মো. আকুল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা ও নানান অসংগতি পাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিকটিকে সিলগালা করা হয়।
বৃষ্টির বাবা সাইফুল শেখ বলেন, ভুয়া ডাক্তার দিয়ে ক্লিনিক মালিক আমার মেয়েকে সিজার করিয়েছে। সিজারের সময় একাধিক নাড়ি কেটে মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আমি সুষ্ঠু বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছি।
নিহত মর্জিনা খাতুনের স্বামী জহুরুল ইসলাম বলেন, নোভা ক্লিনিকে সিজারের সময় আমার স্ত্রীর নাড়ি কেটে যায়। সেজন্য অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। বুঝতে না পেরে সেদিন ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফন করা হয়েছে। সেজন্য আদালতে মামলা করব আমি।
নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বদর উদ্দিনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে ক্লিনিকের একজন কর্মচারী বলেন, দুটো রোগীরই নাড়ি কেটে যায়। দুজনই রাজশাহীতে মারা যান।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. মো. আকুল উদ্দিন জানান, মাত্র চারদিনের ব্যবধানে নোভা ক্লিনিকে দুইজন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের পরে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানানো যাবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত জানিয়েছেন, অল্প সময়ে দুজনের মৃত্যুর অভিযোগ এবং নানান অসংগতি থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিকটিকে সিলগালা করা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available