শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের শাল্লায় সরকারি রাস্তার পাকা ব্লক দিয়ে কবরস্থানে বসত বাড়ি নির্মানের অভিযোগ উঠছে। উপজেলার শাল্লা ইউনিয়নের দামপুর গ্রামের ইউসুফ মিয়া ও আলিফ মিয়াসহ তাদের আত্মীয় স্বজন কবরস্থান দখল করেছেন বলে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে দামপুর গ্রামবাসী।
জানা যায়, দামপুর-চব্বিশা কবরস্থানে মাটি ভরাট করে গাছপালা লাগিয়ে বসত বাড়ি-ঘর ও শৌচাগার নির্মাণ করে দামপুর গ্রামের ইউছুফ মিয়া ও আলিফ মিয়াসহ অন্যন্যারা ২৫ বছর ধরে বসবাস করছেন। এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে দামপুর গ্রামের আলাজদ মিয়ার ছেলে হুমায়ুন মিয়া।
দামপুর গ্রামের আব্দুল করিম বলেন, শাল্লা উপজেলা প্রশাসন দামপুর-চব্বিশা কবরস্থানের ভূমি সার্ভেয়ার দ্বারা পরিমাপ করে ইউছুফ মিয়া ও আলিফ মিয়াকে কবরস্থানের ভূমি ছাড়তে বললেও কর্ণপাত করছে না ইউছুফ মিয়া ও আলিফ মিয়ারা।
কবরস্থানের ভূমি পরিমাপের বিষয়ে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেবের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি বদলি হয়ে চলে এসেছি। বিষয়টি বেশ পূর্বের। তবে দামপুর-চব্বিশা কবরস্থানের ভূমি পরিমাপে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। পরিমাপ কালে দেখা যায়, কবরস্থানের প্রায় ২০ফুটের
বেশি জায়গাজুড়ে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে রেখেছে ইউছুফ মিয়া ও আলিফ মিয়ারা। আমি ওদেরকে কবরস্থানের জায়গা ছাড়ার জন্য মৌখিক ভাবে বলেছিলাম। আমি চলে এসেছি, এখন কোন অবস্থায় আছে তাতো বলতে পারবো না।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কবরস্থানের উপর ইউছুফ মিয়া ও আলিফ মিয়ারা বসত বাড়ি তৈরী করে বসবাস করছে। আবার সরকারি রাস্তার পাকা ব্লক দিয়ে বাড়িতে বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়ালও নির্মাণ করাসহ বাড়িতে যত্রতত্র সরকারি রাস্তার ব্লক পড়ে থাকতেও দেখা যায়।
এসব বিষয়ে গ্রামবাসীর সাথে কথা বলতে গেলে দামপুর গ্রামের আমিনুর মিয়া বলেন, আমার আব্বাকে ওই খানে কবর দিয়েছিলাম। যা এখন ইউছুফ মিয়া ও আলিফ মিয়াগণের বসত ঘরে পড়েছে। কিন্তু বাবার কবর জিয়ারত করার কোনো সুযোগ নেই।
শিক্ষক আব্দুল করিম বলেন, ওরা আমাদের একমাত্র কবরস্থানের ভূমি অন্যায় ভাবে দখল করে বাড়ি-ঘর, শৌচাগার তৈরী করে ও গরুবাছুর রেখে কবরস্থানের পবিত্রতা নষ্ট করছে। এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি কামনা করেন।
সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বার মো. সিরাজ মিয়া বলেন, পূর্বে আমাদের কবরস্থানের জমি কয়েক বার পরিমাপ করা হয়েছে। প্রতি মাপেই কবরস্থানের জমি তাদের বাড়িতে রয়েছে দেখা গেছে। তারা কবরস্থানের জায়গা ছেড়ে দেবার কথা বলে, কিন্তু ছাড়েনি। তাই আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। এছাড়াও গ্রামের অনেকেই তাদের বাবা-মায়ের কবর আলিফ মিয়া, আঙ্গুর মিয়া, ইউছুফ মিয়াদের বসত ঘরে রয়েছে বলে জানান।
এ বিষয়ে ইউছুফ মিয়া ও আলিফ মিয়াদের সাথে কথা বলতে চাইলে তাদেরকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে ওই বাড়ির যুবক মোহন মিয়া বলেন, গ্রামবাসীর দাবি ঠিক না।
আমরা আমাদের বাড়িতেই অবস্থান করছি। গ্রাম্য বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধের কারণে ও আমাদেরকে হেনস্থা করতেই তারা (হুমায়ূন গং) আমাদের সাথে উঠে-পড়ে লেগেছে। এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, আমাদের বাড়িটি কবরস্থানের পাশে, তাই কিছুটা হয়তো আমাদের বাড়িতে ঢুকতে পারে।
আপনাদের বাড়িতে সরকারি রাস্তার পাকা ব্লক কীভাবে এলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সতের সালের বন্যার সময় এনেছিলাম। আমরা একা আনিনি, গ্রামের অনেকেই এনেছেন বলেই তিনি চলে যান।
এ ব্যাপারে শাল্লায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলা উদ্দিন বলেন, দামপুর-চব্বিশা কবরস্থানে একটি অভিযোগ পেয়েছি। এরইমধ্যে আমি সার্ভেয়ার পাঠিয়েছি, সার্ভেয়ার সরজমিন পরিমাপের প্রতিবেদন পেলেই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available