বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাকৃবির গবেষণা কৃষকদের সমস্যা সমাধানে নিবেদিত। কম খরচে বেশি পুষ্টি ও লাভ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাকৃবি গবেষক উচ্চ ফলনশীল বাউ মিষ্টি আলু-৫ জাত উদ্ভাবন করেছেন। এই জাতের মিষ্টি আলু কৃষকের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন এবং আর্থিক উন্নতির পথ সুগম করবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) কৃষকদের মাঝে বাউ মিষ্টি আলু-৫ এর চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ফজলুল হক বলেন, কৃষি বিষয়ক যেকোনো গবেষণায় কৃষকের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকদের মাধ্যমেই গবেষণা মূল্যায়িত হয়। কারণ আমাদের গবেষণা প্রধানত কৃষকদের জন্যে। আজ বাউ মিষ্টি আলু-৫ এর চারা বিতরণের মাধ্যমে কৃষকরা এই গবেষণায় সম্পৃক্ত হয়েছেন। যদি আপনারা এই চারা থেকে সফলভাবে আলু উৎপাদন করতে পারেন, তাহলে জাতটি আপনাদের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়বে এবং এর পুষ্টি সারা দেশে পৌঁছাবে।
তিনি আরও বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে দুধ ও ডিমের পাশাপাশি মিষ্টি আলু বিতরণ করা উচিত, যা পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কৃষক ও খামারিদের উপকৃত করবে এমন গবেষণার সংখ্যা বাড়ানো দরকার, যাতে দেশের কৃষক ও জাতি আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
১৯ অক্টোবর শনিবার দুপুর ১২টায় জেনেটিক্স এন্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগের মাঠ গবেষণাগারে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রাশেদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান,বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. হেলাল উদ্দীন, ইন্টারন্যাশনাল পটেটো সেন্টারের (সিআইপি) কান্ট্রি প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ড. দেবাশীষ চন্দ এবং প্রধান গবেষক ও কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.বি.এম আরিফ হাসান খান রবিন।
প্রধান গবেষক ড. এ.বি.এম আরিফ হাসান খান রবিন বলেন, আজকের এই আয়োজনের মাধ্যমে ১০০ জন কৃষককে ১০০টি করে মিষ্টি আলুর চারা দেওয়া হয়েছে, যা ১ শতক জমির জন্য পর্যাপ্ত। আমাদের লক্ষ্য কৃষকদের মধ্যে এই উন্নত জাতটি দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া। বর্তমানে আমরা চাইলে ২০ হাজার চারা আরও বিতরণ করতে পারবো এবং পরবর্তীতে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক চারা দেওয়া সম্ভব হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষকরা উন্নত জাতের মিষ্টি আলু চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন।
বাউ মিষ্টি আলু-৫ এর চারা পাওয়ার পর কৃষক আব্দুল করিম তার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে বলেন, আমি অনেক দিন ধরে আলু চাষ করছি, কিন্তু এই বাউ মিষ্টি আলু-৫ জাত সম্পর্কে প্রথম শুনলাম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই উন্নত জাতের চারা পেয়ে খুবই খুশি। এটা কম খরচে চাষ করা যায় বলে শুনেছি এবং এর পুষ্টিগুণও বেশি। আমরা যদি এই আলু থেকে ভালো ফলন পাই, তাহলে আমাদের এলাকায় এই জাতটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আশা করি, এই চাষাবাদ থেকে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হবো এবং পরিবারের পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হবে।
জানা যায়, বাউ মিষ্টি আলু-৫ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত এবং এটি সারা বাংলাদেশে চাষযোগ্য। বাউ মিষ্টিআলু-৫ স্বল্প জীবনকালীন, ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়। প্রতি কন্দের গড় ওজন ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম হয় ও দেরিতে ফসল ঘরে তুললে কন্দের ওজন আরও বেশি হতে পারে। প্রতি গাছে চার থেকে ছয়টি বা তার চেয়ে বেশি মিষ্টিআলু হতে পারে। এতে গ্লুকোজের পরিমাণ প্রতি ১০০ গ্রামে ৭.৮ গ্রাম। কন্দের রং লালচে গোলাপী এবং আকর্ষণীয়। কন্দে শুষ্ক পদার্থের পরিমাণ শতকরা ৩০ ভাগের কাছাকাছি। প্রতি ১০০ গ্রাম কন্দে প্রায় ০.১৫ মিলিগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ৩.৯ মিলিগ্রাম অ্যান্থোসায়ানিন এবং ১৫ মিলিগ্রাম ফ্যানোলিক উপাদান পাওয়া যায়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available