এম এইচ রনি: সম্প্রতি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান পদ দখল করে থাকা শিবলী রুবায়েতের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় ড. এম. মাসরুর রিয়াজকে। পরে তাকে নিয়ে বিএসইসির অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে শুরু হয় বিতর্ক। যদিও এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন খোদ অ্যাসোসিয়েনের সদস্যরা।
এছাড়াও সরকারের নিয়োগ পাওয়া নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানকে নিয়ে অফিসার্স ওয়েলফেয়ারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিতর্ক ভালো দৃষ্টিতে দেখছেন না পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। এই বিতর্ক প্রভাব পুঁজিবাজারের উপরে পড়তে পারে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা এমনটাই মনে করেন তারা।
জানা যায়, গত ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়োগ দেওয়া চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুরের বিষয়েও বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন এবং তাকে চান না বলে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার। অন্যদিকে গতকাল ১৪ আগস্ট মাসরুরকে নিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এমনটি করা হয়েছে বলে ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে একই সংগঠনের ৭ সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদেরর ৬ জন। একইসঙ্গে মাসরুরকে নিয়ে দেওয়া বিবৃতির সঙ্গে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই জানান সেই ৬ জন কার্যনির্বাহী সদস্য। এতে করে স্পষ্ট হয়ে যায় এই বির্তকের পেছনে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের দাফতরিক প্যাডে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি পত্র গত ১৩ আগস্ট রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার হয়, যা দৃষ্টিতে এসেছে।
ওই পত্রে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, সদ্য নিয়োগকৃত বিএসইসি’র চেয়ারম্যান বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্যদের মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ড. এম. মাশরুর রিয়াজের মতো বিতর্কিত ব্যক্তির জন্য কমিশনের কর্মপরিবেশ অনুকূলে হবে না, বিধায় ইতোমধ্যে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন বাতিল করার দাবি উত্থাপনের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়।
তবে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, মতবিনিময় সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। কোন সিদ্ধান্ত কেবল এজিএম/ইজিএম/কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় গৃহীত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এছাড়া রাষ্ট্রের কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন প্রস্তাব কোন ফোরামে উপস্থাপনের অধিকার অ্যাসোসিয়েশনের নেই।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেখানে চেয়ারম্যানকে মানা আর না মেনে নেওয়ার কোন বিষয় থাকতে পারে না। এভাবে যদি মানা না মানার বিষয় হয় তাহলে অনেক জায়গায় অনেক কিছুই মানা যায় না। এই মানা না মানার সংস্কৃতিকে উৎসাহ দেওয়া ঠিক না। তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে তাহলে তা তদন্ত করে দেখা হোক। আর যদি অভিযোগ মিথ্যা হয় তাহলে তার নিয়োগের বিষয়ে রাইট রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোন সেমিনার ও প্রোগ্রামে দেখা হলেই যে তার পূর্ব পরিচিত বা ঘনিষ্ঠ হবে এমন কোন কথা নাই। প্রকৃত অর্থে একটা লোকের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে, সে যদি অনুপযুক্ত হয়, সে যদি ওই ফিল্ডে ওইটা হ্যান্ডেল করতে পারবে না বলে মনে হয় তা হলে তাকে না দেওয়াই ভালো। কিন্তু ভিতর থেকে যদি কেউ বলে আমি চাইনা আমি চাইনা এটা আবার ঠিক না।
এদিকে, প্রতিবাদলিপিতে সাক্ষর করেছেন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ৭ সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদের ৬ জন।
এ বিষয়ে শাহ আলম বাবু নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বৈরাচারী শাসনকালের সর্বোচ্চ বেনিফিশিয়ারি, শেয়ারবাজার ধ্বংস করার মূল কুশীলব, শেয়ারহোল্ডারদের পথে বসানোর ঘৃণিত ব্যক্তি, বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করায় আমরা অনেক খুশি। আমরা চাই স্বাধীন দেশে কমিশনও স্বাধীন থাকুক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বুঝে শুনেই নতুন চেয়ারম্যানকে নিয়োগ দিয়েছে। আমরা চাই ওনার হাত ধরেই পুঁজিবাজার এগিয়ে যাক। এটাও চাই অতীতে শিবলী কমিশনের মত আর কোন কমিশন যেন সৃষ্টি না হয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক ট্রেকহোল্ডার বলেন, মাসরুরকে না চাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে একজন সিনিয়র নির্বাহী পরিচালকের কমিশনার হওয়া ও একজন কমিশনারের চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন বিফলে যাওয়া। যদিও এখনো ২টি কমিশনার পদ খালি রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগ দেওয়া ২ জন কমিশনার এখনো রয়েছেন। যাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কারণ এরইমধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের নিয়োগ দেওয়া চেয়ারম্যান ও ২ জন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন নিজেদের সম্মান বজায় রাখতে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ নিয়োগ বাতিল বা পদত্যাগে বাধ্য করতে না পারে।
ডিএসইর আরেক সিনিয়র ট্রেকহোল্ডার বলেন, বিএসইসিতে চেয়ারম্যান নিয়োগকে নিয়ে গতকাল সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে কাজ করেছে, তা তারা করতে পারে না। এতে বিএসইসির কাঠামো ঠিক থাকবে না। যারা প্রতিবাদ করেছে চেয়ারম্যান নিয়োগের, তারাও কিন্তু অনিয়মে জড়িত এবং রোড শোতে অংশ নিয়েছে। এখন নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার না হওয়ায় মাসরুরকে নিয়ে গতকাল প্রতিবাদ করেছে। অথচ এরাই দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোসহ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করে আসছে অন্যায়ভাবে।
উল্লেখ্য, ড. এম. মাসরুর রিয়াজ ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে পলিসি এক্সচেঞ্জ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। উনার পিতা প্রয়াত সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। যিনি প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available