টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: নিহত ছেলের ছবি হাতে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে অঝোঁড়ে কেঁদে যাচ্ছেন বিধবা মা বেণু বেগম। মায়ের কাছে আসার জন্য ঢাকার মিরপুর থেকে রওনা হয়েছিল ছেলে ফিরোজ তালুকদার পলাশ (৩৮)। তবে বিধিবাম সেদিন শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনে পড়ে পুলিশের ছোড়া গুলিতে মারা যায় পলাশ।
সরেজমিনে কোটা আন্দোলনে নিহত পলাশের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার ঘাটান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, তার গর্ভধারিণী মা বেণু বেগম ছবি হাতে নিয়ে কান্না করছেন। বাড়িতে সুনসান নিরবতা। একটি কাচা টিনের ঘরে পলাশের মা বসবাস করেন। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে প্রতিবেশীরা। তবে পলাশের স্ত্রীকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। স্বামীর অবর্তমানে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য পলাশের মৃত্যুর কয়েকদিন পরই কর্মস্থলে চলে গেছে স্ত্রী রেশমা খাতুন।
জানা গেছে, ৫ বছর আগে নিহত পলাশ ঢাকার মিরপুর ১২ এলাকায় রংপুর কেমিক্যাল কোম্পানিতে অফিস সহায়ক (পিয়ন) হিসেবে চাকরি করে আসছেন।
১৯ জুলাই শুক্রবার সারা দেশে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুরো দেশ যখন টালমাটাল ঠিক তখনই মায়ের সাথে দেখা করতে পলাশের মন অস্থির হয়ে উঠে। স্ত্রী সন্তানদের বাঁধা উপেক্ষা করেই মায়ের সাথে দেখা করতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর গ্রামের বাড়ির আসার জন্য রওনা হয়।
এ সময় মিরপুর ১০ এলাকায় কোটিা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে হঠাৎ পুলিশের ছোড়া গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পলাশ। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে মিরপুরের আলোক হসপিটালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে পলাশের ব্যবহৃত মোবাইলে থাকা তার মায়ের নম্বরে ফোন করে জানানো হয়, তার ছেলে হাসপাতালে মারা গেছেন সংঘর্ষে গুলি লেগে। পরে মা বেণু বেগম পলাশের স্ত্রীকে ঘটনাটি বললে সে হাসপাতালে গিয়ে স্বামীর মরদেহ দেখতে পায়। ওই দিন গভীররাতেই অ্যাম্বুলেন্সযোগে পলাশের মরদেহ আনা হয় তাঁদের গ্রামের বাড়িতে। পরেরদিন শনিবার সকালে ঘাটান্দির তালুকদার কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পলাশের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ইশরাত জাহান সাবিনা বলেন, পলাশের বুকে একটা গুলি করা হয়েছে। তার পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়েছিল। ৭ বছরের ছোট্ট মেয়ে তার বাবাকে হারালো। ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে তার সাথে সর্বশেষ কথা হয়েছে। এইভাবে কারোর মৃত্যু হবে এটা ভাবা যায় না। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেও বাড়িতে এসেছিল সে। অনেক স্বপ্ন ছিল তার। কে জানতো বাড়ি আসার জন্য তাকে মরতে হবে।
নিহত পলাশের মা বেণু বেগম বলেন, আমার বাবাকে গুলি করে মেরেছে পুলিশেরা। একটা গুলি লেগেছে তার বুকে। পায়েও গুলি লেগে পা ছেড়াবেড়া হয়েছিল। বাসার থেকে আমার কাছে আসতে চাইছিল আমার বাবা। গাড়ি পাই নাই আসার জন্য। আমার দুই ছেলের একটা চলে গেল আমাকে ছেড়ে। ছেলের অনেক স্বপ্ন ছিল সেই ছেলেকে গুলি কইরা মাইরা হালাইলো। আমি বিচার চাই। আমার নাতনি ছেলের বউ তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available