চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের বাকগ্রাম কাজী আহম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি নতুন বহুতল ভবন নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারসহ কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
২০১৯ সালে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় চারতলা বিশিষ্ট বাকগ্রাম কাজী আহম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরপর ৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও কাজটি শেষ না হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ২০১৯ সালে উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের বাকগ্রাম কাজী আহম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনটির নির্মাণকাজ পায় কুমিল্লা আদর্শ সদরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরশাদ এন্ড সন্স। ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করছে আলকরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলালের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার, যথাযথ গুণগত মান ঠিক না রাখা ও কাজে বিলম্ব করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আখের, শরীফ উল্লাহ, রাকিব উদ্দিন নিলয়, জোবায়ের হোসেন, জাহিদুল ইসলাম জানায়, ‘পাঁচ বছর ধরে ভবনটির নির্মাণ কাজ চলছে। কাজ শেষ না হওয়ায় আমাদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় রানা প্লাজার মতো যে কোনো সময় ভবনটি ধসে পড়ার আশংকা রয়েছে।
সিনিয়র শিক্ষক নুরুল ইসলাম চৌধুরী ও জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আলকরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নতুন ভবনটির নির্মাণ কাজ করছেন। নির্মাণ সামগ্রী ও কাজের মানের বিষয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করায় তিনি শিক্ষকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ছয় বছর ধরে চলছে কাজ। কাজের মান নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। আশা করছি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজে সিলেকশান বালুর স্থানে ভিটি বালু দিয়ে ছাদ ঢালাই করেছে ঠিকাদার। ঢালাইতে সঠিক পরিমাণে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের হাতের ছোঁয়ায় ছাদের ঢালাই এবং দেয়ালের আস্তর খসে পড়ছে। দুই-তিন নম্বর ইট দিয়ে দেয়ালের গাঁথুনি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। ভূমিকম্প বা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভবনটি ভেঙ্গে যেতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভবন পরিদর্শন করে দেখেছি কাজের মান অত্যন্ত খারাপ। একজন সাবেক চেয়ারম্যান তার নিজ এলাকায় কীভাবে এত খারাপ কাজ করেন এটা আমার বুঝে আসে না। তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করবে বলে প্রত্যাশা করি।’
এ বিষয়ে মুঠোফোনে ঠিকাদার গোলাম ফারুক হেলাল বলেন, ‘২০১৮ সালের একটি কাজ কোভিড-১৯ এর কারণে কিছুদিন বন্ধ ছিলো। পরে আবার কাজ শুরু করা হয়। নির্মাণ সামগ্রীর অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির ফলে কাজের মান ঠিক রাখা বেশ মুশকিল হচ্ছে। তারপরও গুণগত মানের বিষয়ে তিল পরিমাণ ছাড় দেইনি। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজের মান যাচাই করেছে বহুবার। অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে কাজ চলে। একই প্রকল্পের অনেক কাজ ঠিকাদাররা জামানতের আশা ছেড়ে দিয়ে বন্ধ করে চলে গেছে। নিজ এলাকার কাজ বলে লোকসান হওয়া সত্ত্বেও কাজটি শেষ করার চেষ্টা করছি।’
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সাইট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রুবেল হোসেন বলেন, ‘নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও কাজের মান নিয়ে অভিযোগ উঠায় একবার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে, গুণগত মান ঠিক রেখে কাজটি স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available