আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। জলাতঙ্ক একটি প্রাণীবাহিত র্যাবিস ভাইরাসঘটিত রোগ। সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা জল দেখলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সমাজের নানারকম কুসংস্কারের কারণে অনেক মানুষের এই রোগে মৃত্যু ঘটে থাকে। টিকা প্রদান, সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও রোগ সম্পর্কিত বিভিন্ন সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব। জলাতঙ্ক নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী মো. আনসারুজ্জামান সিয়াম ।
প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করতে হবে
বাংলাদেশে জলাতঙ্ক একটি প্রাণঘাতী ভাইরাসজনিত রোগ, যা প্রধানত কুকুরের কামড়ের মাধ্যমে মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ছড়ায়। প্রতিরোধের অভাবে প্রতিবছর অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। একজন ভেটেরিনারি শিক্ষার্থী হিসেবে, আমার দায়িত্ব শুধু ক্লাসরুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং আমি মনে করি, বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবসটি আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রাণীর স্বাস্থ্য এবং মানুষের স্বাস্থ্যের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। তাই আমাদের লক্ষ্যকে শুধুমাত্র রোগ নিরাময়ে সীমাবদ্ধ না রেখে রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা পালন করা উচিত। বেওয়ারিশ কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীদের টিকা প্রদান, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারের সাথে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করে আমরা এই রোগের বিস্তার রোধ করতে পারি। তাই এ জাতীয় উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা একটি জলতাঙ্কমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি, যেখানে মানুষ ও প্রাণী উভয়ে নিরাপদে থাকবে।
মো সিহাবুল ইসলাম
৫ম বর্ষ, ভেটেরিনারি সায়েন্সেস অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
জলাতঙ্ক প্রতিরোধে নির্বিচারে প্রাণীহত্যা নয়
প্রতিবারের মতো এবারো পালিত হচ্ছে ২৮ সেপ্টেম্বর 'বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস'। জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কারক লুই পাস্তরের মৃত্যুবার্ষিকীর এ দিনটি বিশ্বব্যপী পালিত হয় জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ও এ বিষয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘ব্রেকিং র্যাবিস বাউন্ডারি’ অর্থাৎ জলাতঙ্ক নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার ও বাধা অতিক্রম করে এ সম্পর্কে মানুষের পর্যাপ্ত সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের পাশাপাশি প্রাণীদের জন্যেও একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়া। প্রতিবছর শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনার অভাবে জলাতঙ্কে প্রায় ৫৯ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তাই এই দিবসের উদ্দেশ্য জলাতঙ্ক প্রতিরোধে নির্বিচারে প্রাণীহত্যা নয়, বরং সঠিক সময়ে টিকা গ্রহন এবং আক্রান্ত হওয়ার পর ঐ স্থান ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে সময়মতো টিকা গ্রহণ ইত্যাদি কর্মকান্ডের মাধ্যমে জলাতঙ্ক নির্মূল করা।
সুজানা মহিন জীম
২য় বর্ষ, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ
গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
জলাতঙ্ক এবার হবে জব্দ
কুকুরে আমার ভীষণ ভয়
করবো সবে জলাতঙ্ক জয়।
জলাতঙ্ক অর্থ জলে আতঙ্ক। কিছু মাংসাশী প্রাণী যেমন: কুকুর, বেড়াল, বেজি ও কুকুরের কামড়ে যখন র্যাবিস ভাইরাস শরীরে ছড়িয়ে যায়, তখন পানির প্রতি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, তাকে জলাতঙ্ক বলা হয়। এক্ষেত্রে করণীয়: ১. ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহারে র্যাবিস ভাইরাসের জীবাণু ৭০-৮০ শতাংশ মারা যায় । ২. র্যাবিসের জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর ১৪ দিন নিষ্ক্রিয় থাকে, তাই ১৪ দিনের মধ্যে তার বিরুদ্ধে এন্টিবডি সৃষ্টির জন্য টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. মন্ত্রবিষয়ক বিশ্বাস জীবননাশের কারণ হতে পারে। তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
সাদিয়া খানম
১ম বর্ষ, ভেটেরিনারি সায়েন্সেস অনুষদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ভ্যাকসিন গ্রহণ বাধ্যতামূলক
জলাতঙ্ক মূলত 'র্যাবিস' নামে পরিচিত, যা একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। রেবডোভাইরিডি ফ্যামিলির অন্তর্গত লাইসা ভাইরাস এই রোগের মূল কারণ। এটি মূলত জীবাণু বহনকারী কুকুর বা অন্য যেকোনো বন্য প্রাণীর কামড়ের ফলে ছড়িয়ে থাকে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যেহেতু এ রোগের সুপ্তাবস্থা ১০ দিন থেকে আট মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে, তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গ্রহণ ও সচেতনতার বিকল্প নেই। আক্রান্ত ক্ষতস্থান যত দ্রুত সম্ভব অবশ্যই সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং ভ্যাকসিন নেওয়া বাধ্যতামূলক, তবেই মৃত্যু ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। যে অঞ্চলে জলাতঙ্কের সংক্রমণের ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে সেই অঞ্চলের মানুষদের অবশ্যই প্রি-এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করা উচিত।
এ.এস.এম. সাইফুল্লাহ
৪র্থ বর্ষ, ভেটেরিনারি মেডিসিন এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available