রাবি প্রতিনিধি: ‘মা’ এমন একটি মধুর শব্দ যা পৃথিবীর অন্য কিছুতেই নেই। একজন মা একটি বটবৃক্ষ। জীবনের কঠিন সব দিনগুলোতেও অবলীলায় যাতনা মেনে নিয়ে ছায়ার মতই পাশে থাকেন সবসময়। মাকে ভালোবাসতে বিশেষ দিনের প্রয়োজন হয় না। তবুও মা দিবস আরও একবার মায়ের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশের এক অন্যতম মুহূর্ত। এবারের মা দিবসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারুণ্যের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দীন ইসলাম।
পৃথিবীতে মা বেঁচে থাকাই সবচেয়ে বড় নিয়ামত
নুসরাত জাহান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ‘মা’ বড়ই মধুর একটি ডাক, তাই না? আমাদের সবার জীবনে সবচেয়ে কাছের সবচেয়ে পুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে যত্নশীল ব্যক্তিটি আমাদের মা। নিঃস্বার্থ ও অফুরন্ত ভালোবাসা, আমাদের সেবায় দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম, আমাদের সুখের জন্য হাসি মুখে সকল কষ্ট সহ্য করে নেওয়া সেই অবহেলিত ব্যক্তিটিই আমাদের মা। আজ বিশ্ব মা দিবসে সেই সকল মায়েদের জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
অক্টোবর ২০২৩, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে জীবনে প্রথমবারের মতো পারি জমিয়েছিলাম বাড়ি থেকে অনেক দূরের শহরে। এখনও মনে পরে, আমাকে রেখে যেতে এসে ঐদিন কতটা কান্নায় ভেঙে পড়েছিল আমার মা। রাতে ফোন দিয়ে আমাকে বলেছিল, জানিস নুসরাত আমার জীবনের আগে কোনো দিন কোনো কিছুতে এতোটা কষ্ট হয় নাই, আসলে মায়েদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হয়তো কোনো সঙ্গা দিয়ে সঙ্গায়িত করা সম্ভব নয়। খুব মিস করি মাকে। যখন কান্না পায় ইচ্ছা করে দূরুত্বকে তুচ্ছ করে ছুটে যাই মায়ের কাছে। জড়িয়ে ধরি, আবার ফিরে যাই শৈশবে। মায়ের সময়টা আমাদের সবার জীবনে সান্নিধ্যে সুন্দর একটি সময় যেটি আমরা সময় থাকতে বুঝি না। তাই আপনাদের যাদের মা বেঁচে আছেন এবং যারা মায়ের সাথে আছেন তারা মায়েদের যত্ন নিন, মায়ের কাজে সাহায্য করুন। যারা দূরে থাকেন নিয়মিত ফোন দিয়ে তাদের খোঁজ নিন। শুধু দিবসে ফেসবুক পোস্ট- এই যেন মায়ের প্রতি আবেগ ও ভালোবাসা সীমাবদ্ধ না থাকে। সেই দিকে সচেতন হন। সর্বোপরি, তাদের অনেক ভালোবাসুন, তাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করুন। কারণ, পৃথিবীতে মা বেঁচে থাকা সবচেয়ে বড় নিয়ামত।
মা শব্দটি ছোটো হলেও গভীরতা অনেক
হাসান মাহমুদ রাকিব, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: মা একটি মাত্র শব্দ নিয়ে গঠিত। শব্দ ছোটো হলেও গভীরতা বিশাল। বিশ্বে জাতিসংঘ অনুমান করে যে সারা বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৩৮৫,০০০ শিশুর জন্ম হয় (১৪০ মিলিয়ন বছরে)। এই সংখ্যাটি ২০২০ থেকে ২০৭০ পর্যন্ত পঞ্চাশ বছরে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে। প্রতি বছরে শিশুর এই জন্ম স্বাভাবিক ভাবেই মাতৃত্বের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়। একজন মায়ের গুরুত্ব শুধু দিবস পালনের মাধ্যমেই বোঝানো সম্ভব নয় কখনই। একবিংশ শতাব্দীতে এসে মায়ের ভূমিকা ও ব্যক্তিসত্তা বৃহত্তর সমাজকে প্রভাবিত করে তুলেছে। মা মানে শুধু এখন গৃহীজীবন নয়।
একজন মা একই সাথে বর্তমানে সু শিক্ষিত ও বিভিন্ন পেশাতে ভূমিকা রাখছেন। ঘরের বন্দী জীবন থেকে তাদের মুক্তজীবন ভূমিকা রাখছে দেশের সমগ্র খাতে। অথচ এই ভূমিকা রাখতে গিয়ে প্রতিটা পদক্ষেপে হীনতা ও লাঞ্চনার শিকার হচ্ছেন আমাদের মায়েরা। আমাদের সমাজ একজন মা এর প্রগতিশীলতা কে এখনও স্বীকৃতি দিতে পারে নি। কৃষি ও শ্রম বাজারে তাদের অংশগ্রহণ অনেক কম এখনো। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা হবে বিশ্ব মা দিবস। দিবসের প্রতি সাময়িক শ্রদ্ধা কখনই একজন মাকে আন্তনির্ভশীল করে তুলবে না বরং মায়ের যথাযথ সম্মান ও দায়িত্ব রক্ষার্থে সুষ্ঠু আইন প্রণয়ণ করতে হবে। মাকে তার বৃদ্ধ জীবনে পর্যাপ্ত সেবা ও স্থিতিশীল জীবন প্রদানের রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা করতে হব। মনে রাখতে হবে মায়ের যত্নই ভবিষ্যৎ শিশুর সুষ্ঠু জীবন নিশ্চিত করবে।
তোমাকে এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসি মা
শারমিন আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: প্রিয় মা, এই প্রথমবার তোমাকে নিয়ে কিছু লিখতে বসলাম। তোমাকে নিয়ে লেখা শুরু করলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা শেষ হয়ে গেলেও আমার আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ হবে না। আব্বু চলে যাওয়ার পরে তুমিই আমাদের বটবৃক্ষ হয়ে উঠেছো, যেই বৃক্ষের শিকড় আঁকড়ে ধরে আমরা ভাই-বোনেরা বেচে আছি। আচ্ছা মা, শত মাইল দূরে থেকেও আমার মন খারাপ হলে তুমি কীভাবে বুঝতে পারো? তোমার থেকে এতদূরে থাকা সত্ত্বেও কীভাবে আমার মন খারাপের সময়টাতেই ফোন দিয়ে আমি কেমন আছি সেটা জিজ্ঞেস করো? তবে কী তোমার থেকে দূরে থাকলেও তুমি আমার মন পড়তে পারো!! জানো মা, এখনো আমার মাঝে মাঝে খিদে পেলেও নিজে খাবার তুলে খেতে ইচ্ছে করে না। এটা তো আমার সেই পুরোনো অভ্যাস, তুমি তো জানোই। সেই সময়টাতে তোমার স্মৃতিগুলো বড্ড মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। তখন মনে হয়, এখন তোমার কাছে থাকলে তো ঠিক আমার মুখের সামনে খাবার ধরে বলতে, ‘নে হা কর’। এখন অসুস্থ হলে বারবার চোখের সামনে তোমার চেহারাটাই ভেসে আসে। মনে হয়, যদি তোমার কাছে যেতে পারতাম তবেই শান্তি পেতাম, সুস্থ হয়ে উঠতাম। এই যে তোমার থেকে দূরে আছি, এই দূরে থাকা আমার মনে এক ধরনের অসুখের সৃষ্টি করেছে, যেই অসুখ হয়তো কোনো ঔষধেই সারবে না। রোজ নিয়ম করে তোমার সাথে কথা না বললে, সারাদিন কী কী হলো সেগুলো তোমার সাথে শেয়ার না করতে পারলে তো আমার পেটের ভাত হজমই হয় না। তোমাকে ছাড়া আমি একদম অসম্পূর্ণ মা। তোমার স্নিগ্ধ, শান্ত, কোমল চেহারার মাঝেই আমার স্বর্গসুখ খোঁজে পাই মা। তোমার এই ছোট মেয়েটি যে তোমাকে কতটা ভালোবাসে সেটা কখনোই মুখ ফুটে বলতে পারেনি তোমাকে। এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসি তোমাকে মা। ইনশাআল্লাহ, তোমার মেয়ে একদিন তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করে তোমাকে একজন গর্বিত মা করে তুলবে।
মায়েদের স্থান যেন বৃদ্ধাশ্রমে না হয়
নিশাত আনান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: পৃথিবীতে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার জন্য যার একজন মা আছেন সে কখনো দুঃখী হতে পারে না। ‘ভালোবাসি’ কথা টার গভীরতা তখন বোঝা যায়, যখন আমরা আমাদের প্রিয় মানুষটিকে তা বলি। আমরা কতো ভাবে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাই অথচ মা কে যে ভালোবাসি এই কথাটা কেনো যেন প্রকাশ করতে পারি না, তাই মা দিবসকে সামনে রেখে আজ সাহস করে বলে দিতে চাই ‘মা তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি’। মাতৃত্বের ছোয়া লেগে থাকুক প্রতিটি সন্তানের গায়ে। শুধু মাত্র মা দিবসে মাতৃপ্রেম নয় বরং আজীবন মাকে তার সম্মান ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমেই মা দিবস সার্থক হয়ে উঠবে। আমাদের সকলেরই উচিত মায়ের প্রতি যত্নবান হওয়া ঠিক যেমনটি মায়েরা আমাদের শিশুকালে নিতেন। আর যেন কোনো মায়ের শেষ স্থান বৃদ্ধাশ্রম না হয়। হাসি ফুটুক প্রতিটি মায়ের মুখে। ভালো থাকুক পৃথিবীর সব মায়েরা।
মায়ের তুলনা মা নিজেই
ফারজানা ইসলাম পপি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: ‘মা’ একটি ছোট্ট শব্দ। এই শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব মায়া, মমতা, অকৃত্রিম স্নেহ, আদর, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সব সুখের কথা। চাওয়া-পাওয়ার এই পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। মায়ের তুলনা মা নিজেই। মায়ের মতো এমন মধুর শব্দ অভিধানে দ্বিতীয়টি আর নেই। একজন বাবা তার সন্তানের প্রতি যত্নশীল হলেও একজন মা তার সন্তানের প্রতি সর্বদা প্রেমময়। মায়েরা তাদের অসীম প্রজ্ঞা এবং সীমাহীন ভালবাসায় আমাদের মানুষ করে তুলে। তারা আমাদের প্রথম শিক্ষক, আমাদের মন এবং হৃদয়কে দয়া, স্থিতিস্থাপকতা ও সহানুভূতির পাঠ দিয়ে লালনপালন করে। যে মুহূর্ত থেকে আমরা আমাদের প্রথম নিঃশ্বাস নিই তারা আমাদের সুস্থতার জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করে। নিজেদের ঘুম, সময়, এমনকি কখনও কখনও তাদের নিজেদের স্বপ্নকে উৎসর্গ করে শুধুমাত্র আমাদের ভালো রাখার জন্য। মা হচ্ছে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ধ্রুবক। ‘মা’ তোমায় ভালোবাসি, এই কথাটি বলার জন্য আলাদা করে কোনো দিবসের বা দিনের প্রয়োজন হয় না। তবুও মায়েদের স্পেশাল ফিল করানোর জন্য আমরা আলাদা একটা দিন ধার্য করতেই পারি ‘Happy Mother’s Day’ 2024
মায়েদের ভালোবাসতে কোনো দিবস লাগে না
তারিফুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: আসলে মা’দের ভালোবাসার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। মা সবার কাছেই প্রিয় একটি শব্দ। যিনি কোলেপিঠে করে বড় করেন এবং সারাজীবন আগলে রাখেন তার নামই মা। আর ‘মা’ দিবস হল, মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিত একটি বার্ষিক ছুটি। মা দিবস সাধারণভাবে মা, মাতৃত্ব এবং মাতৃত্বের বন্ধন, সেইসাথে তাদের পরিবার এবং সমাজে তাদের ইতিবাচক অবদানকে স্বীকৃতি দেয়। এটি আনা জার্ভিস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১০ মে ১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের সেন্ট অ্যান্ড্রু’স মেথডিস্ট চার্চে উপাসনার মাধ্যমে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মা’ দিবস উদযাপন করা হয়েছিল। কিন্তু শুধুমাত্র মা দিবস দেখে ওই একদিন বিশাল একটা কেক এনে কেটে, মাকে অনেক দামি গিফট দিয়ে ছবি তুলে আপলোড করে বছরের বাকি ৩৬৪ দিন মাকে অসম্মান, অবহেলা করলাম, তাহলে এই মা দিবসকে আমি সমর্থন করি না। আমার কাছে মা দিবস মানে, আজকে মায়ের একটু বেশি পরিশ্রম হচ্ছে, মায়ের এই কাজটা আমি করে দেই কিংবা মায়ের এই খাবারটা পছন্দ, এইটা আজকে নিয়ে যাই বাসায়। মায়ের যতটুকু প্রাপ্য অত হয়তো আমরা সন্তানেরা কোনোদিনও দিতে পারবো না তবুও আজকে ‘মা দিবস’ এ আমাদের সকলের শপথ নেওয়া উচিৎ, মাকে যেনো কখনো অসম্মান না করা হয়। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মায়েরা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available