• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ১২:২০:৪১ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ১২:২০:৪১ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

কুমারখালীতে রাস্তার পাশের অপ্রাপ্ত বৃক্ষ নিধন! বিপর্যস্ত পরিবেশ

২৪ এপ্রিল ২০২৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৬:২০

কুমারখালীতে রাস্তার পাশের অপ্রাপ্ত বৃক্ষ নিধন! বিপর্যস্ত পরিবেশ

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: তিন মাস আগেও সড়কের ধারে গাছগুলো ছিল নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে। এই গাছের ছায়াতলে বিশ্রাম নিত পথচারী খেটে খাওয়া মানুষ। আরামে চলাচল করত পথচারীরা। এখন সেখানে ধূধূ মরুভূমি ও তীব্র তাপদাহ।

সামান্য টাকার জন্য সরকার যেন আর গাছ না কাটে এমন আকুতি জানিয়ে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সাঁওতা গ্রামের মোস্তাক শাহরিয়ার। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্র।

আলিমুজ্জামান রাজিব নামের আরেক ছাত্র বলেন, যেহেতু গাছগুলো আমাদের ছায়া দিচ্ছে। সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করছে। সেহেতু গাছগুলো না কাটায় ভালো। তার ভাষ্য, গাছপালা কমে যাওয়ার কারণেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে না, তীব্র তাপদাহ চলছে। তিনি গাছ না কাটার দাবি জানান।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়া থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত পাউবোর জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। সড়কে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর পূর্বে কয়েক হাজার ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করেছিল উপজেলা বনবিভাগ। দরপত্রের মাধ্যমে ২০২৩ সালে যদুবয়রা থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। চলতি বছরেও ওই সড়কের লাহিনীপাড়া থেকে বাঁধবাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটা হয়েছে।

আরো জানা যায়, সম্প্রতি বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত আরো তিন কিলোমিটার সড়কের কয়েক হাজার গাছ কাটার জন্য গাছের গায়ে নাম্বারিং করে দরপত্র সম্পন্ন করেছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য গাছগুলো না কেটে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও পথচারীরা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জিকে খালের লাহিনীপাড়া এলাকায় সড়কের ধারে সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর নেই। কাটা গাছগুলোর গোঁড়া ও কিছু অংশবিশেষ পড়ে আছে। চাঁপড়া বোর্ড অফিস এলাকার খালের পাকা ও কাঁচা সড়কের দুইপাশে মেহগনি, বাবলা, কড়ইসহ নানান জাতের কয়েক হাজার বড় বড় গাছ রয়েছে। সেগুলোর গাঁয়ে নাম্বারিং করা।

এসময় ভ্যানচালক আব্দুল হাকিম জানান, তিনি নিয়মিত ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি প্রায়ই সড়কে বসে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেন। গাছগুলো কাটা হলে আর বসা হবে না তার। তার ভাষ্য, গাছের কারণে মানুষ স্বস্তিতে সড়কে চলাচল করতে পারে। অনেকেই বিশ্রাম নেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন সরকারি কর্মকর্তা দুঃখ প্রকাশ করে জানান, গাছগুলো যেহেতু সড়ক নির্মাণ ও চলাচলে সমস্যা করছে না। সেহেতু শুধু টাকার জন্য কেনো কাটা হবে?  নির্বিচারে গাছ কাটার কারণেই প্রকৃতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তিনি গাছ রক্ষার দাবি জানান।

উপজেলা বনবিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আর্থ সামাজিক ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৪ সাল থেকে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বনবিভাগ। তারা প্রথমে স্থানীয়দের নিয়ে এলাকা ভিত্তিক সমিতি গঠন করে। পরে বিভিন্ন সড়কের ধারে জ্বালানি কাঠের গাছের চারা রোপণ করেন। গাছ দেখাশোনা করে সমিতির সদস্যরা। গাছের বয়স যখন ১০ বছর পূর্ণ হয়। তখন গাছ কাটা ও বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে বনবিভাগ। গাছ বিক্রির ৫৫ ভাগ টাকা পায় সমিতির সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ পায় ৫ ভাগ। আর বনবিভাগ ও সড়ক সংশ্লিষ্ট বিভাগ পায় ২০ ভাগ করে টাকা।

জনগণের সাথে গাছ রক্ষার দাবির সাথে একমত পোষণ করেছেন চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক মঞ্জু। তিনি বলেন, সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, ছায়া ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে গাছগুলো থাকা দরকার। তিনি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে কিছু গাছ ঝড়ে ভেঙে পড়লে মানুষের ঘর-বাড়ি ও দোকানপাটের ক্ষতি হবে, সেগুলো কাটার কথাও জানান তিনি।

পরিবেশবাদী ও গবেষণা গবেষক গৌতম কুমার রায় বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী দেশে ২৫ ভাগ বনভূমি বা গাছপালা থাকা দরকার। কিন্তু সেই তুলনায় গাছ আছে মাত্র ৯ ভাগের কম। তবুও প্রতিদিনই গাছ উজার হচ্ছে। যে মুহূর্তে প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে, পানির মহাসংকট চলছে, প্রচণ্ড গরমে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠে গেছে, পাখিকুল আশ্রয় পাচ্ছে না। সেই মুহূর্তে গাছগুলো কাটার ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক ঘটনা।

তাঁর ভাষ্য, আমরা উন্মাদ মৃত্যের জাতি। যে উন্মাদ মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা শুধু ধ্বংসকেই আনন্দের সাথে গ্রহণ করি, সৃষ্টিকে নয়‌।

উপজেলা বনবিভাগ কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, ১০ বছর পূর্ণ হলেই সমিতির নিয়ম অনুসারে গাছ কেটে পুনরায় নতুন চারা রোপণ করা হয়। ইতোমধ্যে ওই সড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকার গাছ কাটা হয়েছে। অন্যান্য গাছগুলো দরপত্রের মাধ্যমে কাটা হবে। তাঁর ভাষ্য, গাছ রক্ষার কোনো সুযোগ নাই।

যেহেতু তাপদাহ চলছে, সেহেতু এই মুহূর্তে গাছগুলো থাকা ভালো বলে মনে করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি জানান, বনবিভাগের সঙ্গে আলাপ করে বিধিমতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ







ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যু
২১ নভেম্বর ২০২৪ রাত ০৮:০৫:৩৩