কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের মোসলেমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার ডিপ্লোমা ইনন মেকানিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মো. শাহিনুর রহমান (৪২)। তাঁর বিরুদ্ধে জেলহাজতে বন্দী থাকাবস্থায় বেতন উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, তিনি জেলখানায় বন্দী থাকা অবস্থায় কীভাবে বিলসীটে স্বাক্ষর করে বেতন উত্তোলন করলেন! এ ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের বিচারের দাবি করেন তাঁরা। অভিযুক্ত ওই শিক্ষক বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহারপুর গ্রামের মৃত আফছার আলির ছেলে। গ্রেফতারের পর তিনি তিন মাস জেলহাজতে বন্দী ছিলেন।
ঘটনার তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনার মামলায় শাহিনুরকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ২৯ অক্টোবর রমনা থানা পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করে। যেখানে তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছিল।
এদিকে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটি শাহিনুরের সম্মতিতে গোপনে বিল সিটে স্বাক্ষর জাল করে গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের বেতন উত্তোলন করেন। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক গ্রেফতার হলে পরিপত্রের ধারা ৫(২)(খ) অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা আবশ্যক।
কিন্তু শাহিনুরকে বরখাস্ত না করে টাকার বিনিময়ে তাঁর দুই মাসের ছুটি মঞ্জুর করা হয়। একই সময়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১২(১)(ক) ধারাকেও তোয়াক্কা না করে তাঁর সম্মতিতে বিল সিটে স্বাক্ষর জাল করে দুই মাসের বেতন উত্তোলন করেছে এবং হাজিরা খাতায় শাহিনুরকে অনুপস্থিত দেখিয়ে তাঁর ছুটিও মঞ্জুর করেছে, যা বিদ্যালয়ের নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উদয়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলি বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক শাহিনুরের মায়ের অসুস্থতার কারণে মানবিক দিক বিবেচনায় বরখাস্ত না করে ছুটি মঞ্জুর ও বেতন উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়। আমরা তখন নিয়মনীতি সম্পর্কে সচেতন ছিলাম না বলেই এমনটা ঘটেছে।
বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, এটি আমাদের প্রশাসনিক ত্রুটি এবং অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিল। আমরা বুঝতে পারিনি যে তা নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে। তবে বর্তমান প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন সাবু জানান, এ ঘটনার পরে আমি যোগদান করেছি, তাই আমি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারব না।
অভিযুক্ত শিক্ষক শাহিনুর রহমান বলেন, মানবিক দিক বিবেচনায় ম্যানেজিং কমিটি যা করেছে আমি তা মেনে নিয়েছি। কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে আমার আর কোনো বক্তব্য নেই।
বিদ্যালয়ের জমিদাতা নবাব আলী চৌধুরি আক্ষেপ করে বলেন, এ ঘটনায় এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগণ ক্ষুব্ধ। কারণ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রধান শিক্ষক টাকার বিনিময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি করার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন। তিনি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা মো. মোনোয়ারুল হাসান বলেন, শাহিনুরকে গ্রেফতার, হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখিয়ে ছুটি মঞ্জুর এবং স্বাক্ষর করে তাঁর বেতন উত্তোলনের বিষয়গুলো নিয়ে ম্যানেজিং কমিটিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। তাঁরা আমাকে এখনো কিছু অবগত করেননি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available