রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের রৌমারীতে রাবার ড্যামের নিচের অংশে মাটি সরে যাওয়ায় ১৪ কোটি টাকা ব্যায়ে ব্রিজটি হুমকির মুখে পড়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ব্রিজটি ডেবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সেই সাথে নদীর তীব্র স্রোতের কারণে ব্রিজের একপাশে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর দুই পাশের বাঁধটি সংস্কারের অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের ১৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি। পরপর দুটি বন্যায় বাঁধের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় এবং তদারকির অভাবে নষ্ট হচ্ছে ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য রাবার ড্যামটি।
উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা খেওয়ারচর এলাকায় জিঞ্জিরাম নদীতে ২০১০ সালে রাবার ড্যাম প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। দু’দফায় এ প্রকল্পে সরকারের মোট ১৪ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। প্রথম দফায় ১২ কোটি ও দ্বিতীয় দফায় আরও ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়।
উপজলার লালকুড়া খেয়াঘাট থেকে খেওয়ারচর রাবার ড্যাম এলাকাটির তিন কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এই রাস্তাটির বেশিরভাগ এলাকা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের সুরক্ষা ও নদী শাসনের জন্য ২ কিলোমিটার সিসি ব্লক ও রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৮৫ মিটার এই ব্রিজ।
সেতুর দু’পাশের সিসি ব্লক করার কথা থাকলেও নদের পূর্ব সাইটটি নদীতে ধ্বসে গেছে। এ কারণে রাবার ড্যামের নিচের অংশে স্রোতের ধাক্কায় মাটি সরে যাচ্ছে। ব্রিজের পূর্ব পাশে প্রায় ৩০ ফুট গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এসব দেখাশোনার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা মহির উদ্দিন জানান, স্রোতের কারণে সেতুর নিচের মাটি ভাটির দিকে চলে যাচ্ছে। এভাবে কিছিুদিন যেতে থাকলে সেতুটি ভেঙ্গে পড়বে।
ক্ষতিগ্রস্ত আমিনুল ও মোমিনুল ইসলাম জানান, প্রবল স্রোতের কারণে আমাদের বসতবারি ও ফসলি জমি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনমতে ঠাঁই করে আছি নদীর কিনারে। উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরা এসে কিছু সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ব্রিজের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। সেই সাথে পাশে থাকা দুইটি বসতবাড়ি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। তাদের পুনর্বাসন করা জরুরি। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ব্রিজটিও ডেবে যেতে পারে।
খেওয়ারচর রাবার ড্যামের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন রিপন বলেন, জিঞ্জিরাম নদীতে প্রচুর স্রোত থাকায় রাবার ড্যামের নিচে ভাঙ্গন দেখা গেছে। ভাঙ্গন স্থানে জিও ব্যাগ ফেলানো হলে ভাঙ্গনরোধ করা সম্ভব।
যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, ব্রিজের নিচের পূর্বদিকের কিছু কাজ অসম্পন্ন থাকায় স্রোতের কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে। সেখানে প্রায় ৩০ ফুট গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়েছে। তবে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ব্রিজটি ভেঙ্গে যেতে পারে।
উপজলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যে জেনেছি। রাবার ড্যাম ধ্বসে গেলে প্রায় ২৫ একর ফসলি জমি পানিসেচ সংকটে পড়বে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অনেক কৃষক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান জানান, রাবারড্যামের বিষয়টি শুনেছি এবং সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available