শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় সরকারি খাস জমিতে মুজিবনগর বাজার তৈরির নামে এলাকা থেকে প্রায় কোটি টাকার উপরে লোপাট করার অভিযোগ উঠছে শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরি আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই চৌধুরি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল-আমিন চৌধুরি) এর বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ২০২১ সালে সরকারি জমিতে ৪শ’ দোকান ভিটির বাজার নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নেন আল আমিন চৌধুরি। এ প্রেক্ষিতে ওই সময়ে আল আমিন চৌধুরি তার নিজ গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে নিজ বাড়িতে এক মিটিং করেন। উল্লেখ্য, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে গুচ্ছ ভাবে ১শ’ ৫টি আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণের মাধ্যমে মুজিবনগর গ্রামের সূত্রপাত হয়। তারই দক্ষিণ পাশের সরকারি খাস জমিতে মুজিবনগর বাজার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন ওই মিটিংয়ে। তবে মিটিংয়ে কোনো লিখিত রেজুলেশন খোঁজে পাওয়া যায়নি। ওই মিটিংয়ে আল আমিন চৌধুরি তার নিজস্ব ও প্রভাবশালী লোকজনের সমন্বয়ে বাজার নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি নামে একটি মৌখিক কমিটিও তৈরি করেন এবং এলাকার লোকজনের কাছ থেকে প্রতি দোকান ভিটির বিপরীতে ৩০ হাজার টাকা হারে টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব দেন ওই কমিটিকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শ্রীহাইল গ্রামের বাসিন্দা প্রখ্যাত খুনি ও আল আমিন চৌধুরীর ডানহাত আফজাল মিয়া, জুবায়ের আহমেদ ডালিম, জিয়া মেম্বার, হেকমত মিয়া, অরূপ মিয়া ও ইছাকপুর গ্রামের আশাদুল মিয়ার মাধ্যমে শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম তথা আশেপাশের উপজেলার বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ৪শ’ দোকান ভিটির বিপরীতে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু ৪ বছরেও মুজিবনগর বাজারের কোনো দর্শনীয় কার্যক্রম না হওয়ায় টাকা দেয়া লোকজন পড়েছেন বিপাকে।
এ বিষয়ে মুজিবনগর বাজার কমিটির সদস্য আফজল মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা চধরী সাবের কথামতো এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা উঠিয়েছি। তবে আমি যে টাকা উঠিয়েছি, তার সব টাকাই আমি চৌধুরি সাবেক দিয়েছি।
কত জনের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রসিদ দেখে বলতে হবে ভাই। যাদের কাছ থেকে টাকা এনেছি, তাদেরকে রসিদ দিয়েছি বলে জানিয়েছেন তিনি। মুজিবনগর বাজারে কতটি ভিটি করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন ৪শ’ ভিট হবে ভাই।
কমিটির অন্যতম সদস্য জুবায়ের আহমদ ডালিমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ৪৯ জনের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেছি। আল আমিন সাহেবের নির্দেশে কিছু টাকার মাটি কাটিয়েছি এবং বাকি টাকা আল আমিন সাহেবকে দিয়েছি। বাজার কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না, আল আমিন সাহেবই ভালো বলতে পারবেন। অনুরূপ ভাবে অরূপ মিয়া, জিয়া মেম্বার ও হেকমত মিয়া জানান তারাও টাকা উত্তোলন করে আল আমিন চৌধুরীকে দিয়েছেন। তারা আরও জানিয়েছেন, চৌধুরি সাহেবের কথায় বাজারের নামে টাকা উঠিয়ে তারাও বিপাকে পড়েছেন। লোকজনকে দিতে পারছেন না দোকান ভিট, ফিরিয়ে দিতে পারছেন না টাকাও।
তবে শ্রীহাইল গ্রামের দুলাল মিয়া জানান, তিনি ৩টি দোকান ভিটির জন্য ৯০ হাজার টাকা আল আমিন চৌধুরীকে সরাসরি দিয়েছেন। টাকাটা কখন দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম মিটিংয়েই উপস্থিত লোকজনের সামনেই তিনি দিয়েছেন।
টাকা উত্তোলনের বিষয়ে ইছাকপুর গ্রামের আশাদুল মিয়ার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ১৬টি ভিটির টাকা উঠিয়েছি এবং আল আমিন চৌধুরীর সরকারি বাস ভবনে গিয়ে আল আমিন চৌধুরীর কথায় ডুমরা গ্রামের চয়ন চৌধুরীর কাছে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা এবং কমিটির সদস্য ডালিমের কাছে অবশিষ্ট ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। তবে চয়ন চৌধুরি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
অন্যদিকে সরকারি খাস জায়গায় বাজার করার বিষয়ে সরকারি লাইসেন্স প্রথায় দোকান ভিটি বন্দোবস্তের খোঁজ নিতে শাল্লা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দেখা যায় এ সম্পর্কিত কোনো ডকুমেন্ট সংরক্ষিত নেই।
অপরদিকে উপজেলার দামপুর গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ মিয়া ১টি ভিটির ও কান্দিগাঁও গ্রামের সুন্দর আলির স্ত্রী ও সাবেক মহিলা মেম্বার মনোয়ারা বেগম এ প্রতিবেদককে জানান, তিনিও মুজিবনগর বাজারে ২টি দোকান ভিটের জন্য টাকা দিয়েছেন। কার কাছে টাকা দিয়েছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা শ্রীহাইল গ্রামের আল আমিন সাহেবের আস্থাভাজন আফজল মিয়ার কাছে টাকা দিয়েছি।
৫ আগস্টের পর থেকে শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শকের ছোট ভাই চৌধুরি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এলাকায় না থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করেও তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন প্রতিউত্তর না পাওয়ায় তার বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে ৪নং শাল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সাত্তার মিয়ার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টা আমার পিরিয়ডে নয়, তবে আমি শুনেছি, শ্রীহাইল গ্রামের আল আমিন চৌধুরি ও তার লোকজন মুজিবনগরের কাছে একটি বাজার করবে বলে বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে অনেক টাকা উত্তোলন করেছে। তিনি আরও বলেন, এখানে বাজার হবে না। তাই আমি মনে করি এলাকার লোকজনের কাছ থেকে যে বা যারাই দোকান ভিট দেয়ার কথা বলে টাকা উঠিয়েছে, তাদের টাকা ফেরত দিক। অন্যথায় ভবিষ্যতে এলাকায় এ নিয়ে আইন-শৃংখলার চরম অবনতি ঘটবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available