লালমনিরহাট প্রতিনিধি: বন্যার পানি নেমে গেলেও কাজ কর্মহীন বানভাসিদের খাদ্য ও অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে নদী ভাঙনে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে ভাঙন কবলিতরা। এই মহাসংকট নিয়ে গত ২০ দিন যাবত দিন পার করছে তিস্তা পাড়ের জেলা লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
১৫ জুলাই সোমবার লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি দুপুর ১২টায় ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে বর্তমানে পানি কমে বিপদসীমার ৬৮ সে.মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি শিমুল বাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কয়েকদিন আগে উজানের ঢলে ও ভারি বর্ষণে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বসতভিটা পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। এতে প্রায় দশ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে নদীর পানি কমলেও ভাঙন থামছে না। এই বানভাসি অধিকাংশ মানুষ শ্রমিক, দিনমজুর ও কৃষক। বন্যার মধ্যে কাজকর্ম না থাকায় বেকার বসে রয়েছে। এ কারণে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সংকটের কারণে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকেরা বিপাকে পড়েছে। গবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু আয়-রোজগার না থাকায় কোন চিকিৎসাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারছে না বানভাসি এই অসহায় মানুষরা। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ায় ২০দিন যাবত সংকটে দিন পার করছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।
সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিএফ চাল ও শুকনো খাবার কিছু মানুষ পেলেও অধিকাংশ বানভাসীর প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষেরা। অন্যদিকে বন্যার সময় নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় তিস্তা পাড়ের মানুষের বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে পথের ফকির হয়ে যাচ্ছে।
সদর উপজেলার রাজপুর গ্রামের লাইজু হোসেন জানান, নানা সংকটে অসহায় হয়ে পড়েছি আমরা। সমস্যা আমাদের ঘিরে ধরেছে। আয় রোজগার নেই। খাবার কেনার টাকা নেই। পানির মধ্যে দিয়ে সার্বক্ষণিক চলাচল করায় নারী-পুরুষ শিশু অনেকের হাত পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়াসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। এছাড়াও গবাদি পশু নিয়েও সংকটে রয়েছি। তাদেরকে খাবার দিতে না পারায় গবাদিপশুগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে।
এছাড়াও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। কয়েকদিনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৩০টি বাড়ি। অসহায় মানুষেরা জায়গা না পেয়ে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধের ধারে ঘরবাড়ি আসবাবপত্র স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ আবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সবচেয়ে বেশি ভাঙন এলাকা হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে পানি নেমে যাওয়ায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। কৃষি জমিতে ধান লাগানো বালু দিয়ে ভরাট হয়েছে। রাস্তাঘাট বাঁধ সব ধসে গেছে। গত কয়েকদিনে কয়েক দফা পানি বৃদ্ধির ফলে এখন পর্যন্ত ১৪১টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সরকারি সহায়তা এখনো আমরা দিতে পারিনি।
এদিকে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, ১ম ও ২য় দফায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমির পরিমাণ মোট ৬৪.৬০ হেক্টর ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পরিবার ২১ হাজার ৮শ ৫০ জন। নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় ইতিমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের। তিস্তার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available