• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ভোর ০৪:৪৮:১২ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ভোর ০৪:৪৮:১২ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

ক্যাম্পাস

যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিতে মাতৃভাষা বাংলা

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বিকাল ০৩:১৬:১৩

যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিতে মাতৃভাষা বাংলা

মোতালেব হোসাইন, যবিপ্রবি প্রতিনিধি: ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’‌ দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের অমলিন স্মৃতি স্মরণের মাস এই ফেব্রুয়ারি।

এর বিশেষত্ব এই যে, ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় ভাষার জন্য জীবন দেয়া শহীদদের কথা, সেই রক্তঝরা স্মৃতির কথা। যখনই এই মাসটা এসে যায় ঠিক তখনই ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অনেক গুণে বেড়ে যায় সবারই।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভাষা দিবস পালন করাটাই সবকিছু নয়, বরং ভাষার পরিচর্যা করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার যত্ন নিতে হয়, আর সেই সঙ্গে প্রতিটি ব্যক্তির উচিত ভাষার ব্যবহারের প্রতি যত্নশীল হওয়া। শিক্ষার আনন্দ পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে চাইলে ও প্রকৃত শিক্ষা লাভ করতে চাইলে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান অপরিহার্য। তাই মহান একুশের প্রহরে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় হোক তরুণ প্রজন্মের অঙ্গীকার। ভাষার মাসে মাতৃভাষা নিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদর ভাবনা ও চেতনা তুলে ধরেছেন মোতালেব হোসাইন।

 বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, যবিপ্রবি সংসদের আহ্বায়ক রাশেদ খান জানান, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাঙালির ভাষার জন্য আত্মত্যাগের দিন। ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং আমাদের মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য একটি মর্মস্পর্শী দিবস। ভাষা হলো সংস্কৃতির একটি মুখ্য উপাদান। যা আমাদের ঐতিহ্য, পরিচয় ও চিন্তার বাহক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমাদের চাওয়া, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বন্ধ হোক। কারণ একটি ভাষার বিলুপ্তি মানে হলো সংস্কৃতি ও জ্ঞানের একটি অংশ চিরতরে হারিয়ে যাওয়া। আমাদের দেশে যেমন হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার আগ্রাসন চলছে, তেমনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের আগ্রাসনে পাহাড়ে নৃ-গোষ্ঠিদের মাতৃভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে। সব মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান রেখে নিজের মাতৃভাষার চর্চা হোক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শপথ।

যবিপ্রবি ডিবেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈমুজ্জামান জানান, প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের মাঝে আসে ভাষার প্রতি ভালোবাসা, ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভাষা রক্ষার চেতনা নিয়ে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারী ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি দিক পরিবর্তন করার দিন। ১৯৭১ সালের মহান বিজয়ের ভিত্তি স্থাপন হয়েছিল এই দিনেই। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাংলাদেশের(ততকালীন পূর্ব পাকিস্তান) মানুষ বুঝতে পেরেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের আগ্রাসন থেকে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হলে আন্দোলন ও রাজপথের বিকল্প নেই।

তিনি আরও জানান, নিজের ভাষার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে আত্নত্যাগ তার স্বীকৃতিস্বরুপ ২০০০ সালে জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়।আমাদের পূর্বের প্রজন্ম ভাষার স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়ে গিয়েছে। তাই বর্তমান প্রজন্ম হিসেবে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। বাংলা ভাষার জ্ঞানচর্চায় আমাদের আরো এগিয়ে আসতে হবে। এর অংশ হিসেবে আমাদের বিভিন্ন গবেষণার মূলভাব বাংলায় প্রকাশ করার মাধ্যমে গবেষণার প্রতি সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তোলা, বাংলায় নতুন গঠনমূলক কন্টেন্ট তৈরী এবং বাংলা ভাষা সাহিত্যের বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অংশগুলোর নিয়মিত চর্চা ও প্রসারে মনোযোগী হতে হবে।

বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তৌফিকুল ইসলাম লিমন জানান, মাতৃভাষা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’, আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম লাইন। আপাত দৃষ্টিতে এই লাইনটিকে শুধুই একটি বাক্য মনে হতে পারে কিন্তু এই বাক্যটি পেতে ও স্বাধীনভাবে নিজের মুখে বলতে আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে বহু বছর, দিতে হয়েছে ৩০ লাখ তাজা প্রাণ। শুধু মুখের ভাষাটাকে পাওয়ার আশায় বিনা আপরাধে থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন কারাগারে, সইতে হয়েছে অমানবিক-অসহনীয় নির্যাতন। অবশেষে আমরা পেয়েছি সৃষ্টিকর্তার এক দুর্মূল্য প্রতিদান। আমার মুখের ভাষা,আমার মায়ের ভাষা, আমার মাতৃভাষা।

তিনি আরও জানান, বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে বলতে পারি রক্তের দামে কেনা আমার ভাষা ‘বাংলা ভাষা’। আমরা বাঙালিরা যেমন খাদ্য হিসেবে ভাত ছাড়া অন্য যে কোনো খাবার পেট পুরে খেলেও মানসিক প্রশান্তি পায়না ঠিক তেমনি মনের ভাব প্রকাশ করতে অন্য যে ভাষাই ব্যবহার করি না কেন বাংলা ভাষা ছাড়া মানসিক প্রশান্তি পায় না। কারণ এই ভাষা আমার মায়ের মুখের ভাষা, জন্মের পর শোনা প্রথম ভাষা, আমার মুখের ভাষা, আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষা।

পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম জানান, ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির আত্মত্যাগের মাস, শ্রদ্ধা আর অহংকারের মাস। এই ভাষার জন্যে আমাদের ভাইয়েরা তাদের প্রাণোৎসর্গ করে দিয়েছিল। তাদের প্রাণের বিনিময়ে আজ সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীন ভাষা 'বাংলা ভাষা'। তাই ফেব্রুয়ারি এলেই সকলে মেতে ওঠে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে; উজ্জীবিত হয় প্রাণের চেতনায়। বাঙালির রক্তঝরা এই একুশে ফেব্রুয়ারি বর্তমানে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করেছে। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে এলেও মাতৃভাষাকে এখনো আমরা সঠিকভাবে চর্চা করতে পারি না।

তিনি আরও জানান, যে ভাষার জন্য এত আত্মত্যাগ, এত আন্দোলন, এত দৌরাত্ম্য সে ভাষাকেই আমরা আজ অবহেলা করছি - বিকৃত করছি। পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে, ব্যানারে মানা হচ্ছে না বানান রীতি। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে বাংলার বদলে ইংরেজিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। শুধু আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয়ে বাংলা ভাষা তার স্বকীয়তা-নিজস্বতা হারাচ্ছে। নিজ ভাষার চেয়ে অন্য  ভাষা শেখা ও প্রয়োগের প্রবণতা ব্যাপক বাড়ছে। একই সঙ্গে কমছে বাংলা ভাষাভাষী সাহিত্য বোদ্ধাদের সংখ্যা। বাংলা শুধু একটি ভাষা নয়, এর সঙ্গে জড়িত আছে আবেগ, অনুভূতি, সংগ্রাম। তবে এই চেতনা শুধু ধারণ করলে চলবে না, বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে সচেষ্ট থাকতে হবে।স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। পাশাপাশি গণমাধ্যমে বেতার ও টেলিভিশন (টিভি) চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ছোটদের শুরু থেকেই ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার শেখাতে হবে। তরুণ সমাজ সচেতন হলেই বাংলা ভাষার ব্যবহার ও চর্চা বৃদ্ধি পাবে, এই ভাষাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। বাঁচাতে হবে বাংলা ভাষাকে বিকৃত হওয়া থেকে। তাহলেই পরিতৃপ্ত হবে শহীদরা, ব্যর্থ হবেনা তাদের আত্মত্যাগ, বাংলা ভাষা পাবে প্রাপ্য সম্মান।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ







ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যু
২১ নভেম্বর ২০২৪ রাত ০৮:০৫:৩৩