নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর উত্তরায় অস্ত্রোপচারে কলেজছাত্রীর মৃত্যুর অভিযোগে ডাক্তারকে গ্রেফতার ও তার সনদ বাতিলের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার হাউস বিল্ডিং এলাকায় ১০ মার্চ রোববার বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অবরোধ করেন তারা।
নিহত ছাত্রী সাদিয়া সুলতানা তিথি উত্তরার নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। আন্দোলনকালে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আশপাশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসেন।
এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া হাউস বিল্ডিং থেকে জমজম টাওয়ার ও উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরের ভেতরেও যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের হাউস বিল্ডিং এলাকায় মহাসড়কে ছাত্রছাত্রীরা থাকা অবস্থায় যান চলাচল শুরু করার চেষ্টাকালে যাত্রীবাহী কয়েকটি বাসের গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী সাদিয়া সুলতানা তিথির পেটে টিউমার হয়েছিল। সেটি অপারেশন করতে গিয়ে তার খাদ্যনালি কেটে ফেলেছে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সিফাত তানজিলা। পরে আবার তারা উল্টো তিথির পরিবারকেই হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।’
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘ভুল চিকিৎসায় আমাদের সহপাঠীকে ডাক্তার তানজিলা হত্যা করেছে। আমরা তার বিচার চাই। অনতিবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। তার চিকিৎসার সনদ বাতিল দাবি করি।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আজকে আমাদের এসএসসি পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষ করে আমরা নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে হাউস বিল্ডিং এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরু করি। পরে পুলিশ আমাদের ওই চিকিৎসকের বিচারের আশ্বাস দিলে আমরা মহাসড়ক ছেড়ে দেই।’
সানজিদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ডাক্তার ভুল চিকিৎসায় তিথিকে হত্যার পর আবার তার পরিবারের নামের উল্টো মামলা দিয়েছে। তা ছাড়া পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়েছে।’
আন্দোলনকালে তিথির সহপাঠীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার মা চম্পা আক্তার। তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৩১ জুলাই ইউনিভার্সেল মেডিকেলে আমার মেয়ের টিউমার অপারেশন করানো হয়। কিন্তু ডাক্তার তানজিলা টিউমার অপারেশন করাতে গিয়ে তার নাড়ি কেটে ফেলে। পরে কোনো চিকিৎসা না করিয়েই তাকে রিলিজ দিয়ে দেয়।’
চম্পা আক্তার আরও বলেন, ‘পরবর্তী সময় মেয়েকে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে নিই। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩ সেপ্টেম্বর মেয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় আমরা আদালতে মামলা করলেও কোনো বিচার পাইনি। তানজিলা ডাক্তার নামের কসাই। সে চিকিৎসা না করিয়ে আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই।’
তিথির একজন স্বজন বলেন, ‘তিথি তিন ভাই-বোনের মধ্যে মেজো ছিল। তিথি মারা যাওয়ার পর আমরা ওই হাসপাতালে গেলে সেখানকার কর্তৃপক্ষ আমাদের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।‘ তারা বলে, “আমরা যা পেরেছি করেছি, আপনারা যা পারেন করেন।”
এ বিষয়ে ডিএমপির বিমানবন্দর জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছে। আন্দোলনকালে ওই চিকিৎসকের গ্রেফতার ও লাইসেন্স বাতিলের দাবি তুলে ধরেছে। আন্দোলনকালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মহাসড়কের যানজট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকালে আমরা ডাইভারশন রোডের ব্যবস্থা করে যানজট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। তবুও জসীমউদ্দীন থেকে হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। যা দ্রুত সময়ের মধ্যেই নিরসনের ব্যবস্থা করছি।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available