ফরিদপুর প্রতিনিধি: পৃথিবীর আলো দেখতে না দেখতেই মৃত্যুর প্রহর গুনতে হচ্ছে এক নবজাতককে। চিকিৎসকের অসাবধানতায় এমন পরিণতি হয়েছে ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ চরকমলাপুর এলাকার বাসিন্দা নায়েব আলী ও মোর্শেদা বেগম দম্পতির সদ্য ভূমিষ্ট সন্তানের।
স্বজনদের অভিযোগ, সিজারের সময় কেটে ফেলা হয়েছে ওই নবজাতকের পেটের একটি অংশ। আর ওই চিকিৎসক বলছেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। অপরদিকে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে একটি মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২২ জুন শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় শহরের সৌদি-বাংলা প্রাইভেট হাসপাতালে সিজার করা হয় মোর্শেদা বেগমের। এর আগে ওই দিন বিকালে তার প্রসব বেদনা উঠলে হাসপাতালটিতে নিয়ে আসেন স্বামী নায়েব আলী। পরে সেখানকার গাইনী চিকিসক ডা. শিরিনা আক্তার সিজারিয়ান অপারেশন করেন। এরপর মোর্শেদা বেগম কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। বর্তমানে শিশুটি আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ওই নবজাতকের বাবা পেশায় কসাই। প্রথম সন্তানের মুখ দেখতে প্রসূতি স্ত্রীকে নিয়ে ওই দিন বিকেলে হাসপাতালটিতে ভর্তি করান। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের পরামর্শে সন্ধ্যা ৭টায় স্ত্রীর সিজার করা হয়।
নায়েব আলী অভিযোগ করে বলেন, সিজার করার সময় আমার বাচ্চাটির নাভির পাশে পেট কেটে ফেলেছে ডাক্তার। বিষয়টি ডাক্তার আমাদের বলেনি। প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর আমরা দেখতে পারি পেট দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে। পরে বিষয়টি ওই ডাক্তারকে বললে কোনো গুরুত্বও দেয়নি। বার বার বলার পর পেটে দুটি সেলাই দেয়া হয়। এরপর বাচ্চাটির অবস্থা খারাপ হতে থাকলে রাতেই শিশু হাসপাতালে (ডাঃ জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতাল) নিয়ে যাই। তখন সেখানের ডাক্তাররা উন্নত চিকিসার জন্য ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
তিনি বলেন, আমার বাচ্চাটির অবস্থা ভালো না, উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার টাকাও নেই। ঢাকায় নিয়ে যাব সেই টাকাও আমার নেই। বাধ্য হয়ে রোববার ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হলেও মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানান, ওই নবজাতকের শারীরিক অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। আগামী ৭২ ঘণ্টা না যাওয়া পর্যন্ত আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।
এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলছেন ওই গাইনী চিকিসক শিরিনা আক্তার। তিনি জানান, অপারেশনের সময় দেখা যায় বাচ্চাটির অবস্থান ঠিক জায়গায় নেই। এছাড়া বাচ্চাটির গলার উপর দিয়ে নাড়ি পেঁচানো ছিল। সেটি সরাতে গিয়ে অসাবধানতায় হয়তো নাভির ওই অংশে নাড়ি ছিড়ে যায়। যে কারণে সমস্যাটি হয়েছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম লিখন বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে শিশুটির খোঁজখবর নিয়েছি। তাকে পরিপূর্ণ সুস্থ করার যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রভাবশালী একটি মহল। সাংবাদিকরা ছবি নিতে গেলেও বাধা দেয়া হয় তাদের।
এ ঘটনায় ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মৌখিক অভিযোগ দেন শিশুটির বাবা। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলেছে কোতয়ালী থানার একটি টিম। কোতয়ালী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) শামীম হাসান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান এই ঘটনার কিছুই জানেন না বলে জানিয়ে বলেন, কেউ যদি অভিযোগ দেয় তাহলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে কিছু চিকিৎসক আছেন যারা অভিজ্ঞ নয়, এমনকি তাদের বিষয় ভিত্তিক ডিগ্রিও নেই। কম টাকা নেয় বলে রোগীরা তাদের কাছে যায়। ওই ডাক্তাররাই দুর্ঘটনাগুলো বেশি ঘটান। প্রথম শ্রেণির কোনো চিকিৎসকের হাতে এমন ঘটনা ঘটার কথা না।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available