রাঙামাটি প্রতিনিধি: রাঙামাটির লংগদুতে সোনালী ব্যাংকের ভূতুড়ে ঋণ পরিশোধের চাপ সইতে নাপেরে ব্রেইন স্ট্রোক করে আক্তার হোসেন নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি শনিবার সকালে লংগদুর চাইল্যাতলী এলাকায় নিজ বসতঘরে অসুস্থতাবস্থায় মারা যান।
নিহতের বড় সন্তান বাদশা আলম মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, জীবনে ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণ গ্রহণ না করেও পরিবারের চার সদস্যের নামে অন্তত আড়াই লাখ টাকার ঋণ পরিশোধের নোটিশ প্রাপ্তির পরের দিনই ব্রেইন স্ট্রোক করে প্যারালাইসিস হয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হওয়ার ৫২ দিন পর অবশেষে মারা গেলেন রাঙামাটির লংগদু উপজেলাধীন চাইল্যাতলীর ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ষাটোর্ধ আক্তার হোসেন।
নিহতের বড় ছেলের দাবি, ঋণ পরিশোধের চাপ সইতে নাপেরে তার পিতা ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ অবস্থায় মারা গেছেন। এনিয়ে সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করবেন বলেও প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানিয়েছেন নিহতের সন্তান বাদশা আলম।
লংগদু থানার অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিহত আক্তার হোসেনের পরিবার জানায় গত ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর আক্তার হোসেন, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ মোট চারজনের নামে প্রায় আড়াই লাখ টাকার কৃষি ঋণ রয়েছে উল্লেখ করে সেই টাকাগুলো অবিলম্বে পরিশোধের জন্য আইনী নোটিশ প্রদান করে সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখা কর্তৃপক্ষ।
জীবনে ব্যাংকের আশেপাশেও না আসা দরিদ্র কৃষক আক্তার হোসেন হঠাৎ করেই সোনালী ব্যাংকের টাকা পরিশোধের নোটিশ পেয়ে হতাশা আর আতঙ্কে ব্রেইন স্ট্রোক করে বাকশক্তি হারিয়ে, প্যারালাইজড হয়ে শয্যাশায়ী হন। অবশেষে দীর্ঘ ৫২ দিন পর ২৭ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, প্রভাবশালী প্রতারক চক্র লংগদু’র সোনালী ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারির প্রত্যক্ষ মদদে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫ শতাধিক হতদরিদ্র কৃষকের এনআইডি ও স্থানীয় বাসিন্দার সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে কৃষি ঋণ উত্তোলন করে। এভাবে অন্যের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ২০১০ থেকে ২০১২ সালে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এসব ঋণ সুদে-আসলে বর্তমানে ৩০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে হঠাৎ করেই ২০২৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে লংগদু’র সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ৫০৬ জন হতদরিদ্র কৃষকের নামে ঋণ পরিশোধের নোটিশ প্রদান করলে জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই নোটিশ পাওয়ার পরপরই চাইল্যাতলীর ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম স্ট্রোক করে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে টাঙ্গাইলের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অপর কৃষক সোলায়মান বর্তমানে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জলিল মিস্ত্রি নামের আরেকজন স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে লংগদুতে অসুস্থতাবস্থায় দিনানিপাত করছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available