নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। তার এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর নজরদারি ও মাদকবিরোধী প্রচারণা কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বর্তমানে মাদক পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে ‘মাদককে না বলুন’ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে মাদকবিরোধী মনোভাব গড়ে উঠবে।
১৪ জুলাই রোববার সকাল ১০ টায় মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার হলে এক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোন মাদক উৎপন্ন হয় না। কিন্তু ভৌগোলিকভাবে বিশ্বের দুটি বৃহৎ মাদক বলয় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্টের মধ্যবর্তী স্থানে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় তাদের প্রভাবে বাংলাদেশে অবৈধ মাদকদ্রব্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এসব মাদকদ্রব্য মাদক চোরাকারবারীদের মাধ্যমে দেশে অনুপ্রবেশ করছে এবং এর ফলে সমাজের একটি অংশ, বিশেষ করে যুব সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে যুগোপগোগী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জনবল ও লজিস্টিক সুবিধাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে। নোডাল এজেন্সি হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও কর্মসম্পাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মর্ডানাইজেশন অব ডিএনসি গ্রহণ করা হয়েছে ও লজিস্টিকস সুবিধাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মন্ত্রী সকলকে মাদকের বিরুদ্ধে সমবেত হয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদ এমপি ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মশিউর রহমান এনডিসি। সভাপতিত্ব করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, এনডিসি।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে সকাল ৮ টায় রাজধানীর রমনা পার্কের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। সারা দেশে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মাদকবিরোধী রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে এসব প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ২১ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পুরস্কৃত করা হয়।
এ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী সম্বলিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং অধিদফতরের কার্যক্রম নিয়ে স্যুভেনির ও বার্ষিক ড্রাগ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্যুভেনির ও বার্ষিক ড্রাগ রিপোর্টের মোড়ক উম্মোচন করেন। এছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে মাদক সচেতনতা বৃদ্ধি বিষয়ক অধিদফতরের প্রস্তুত করা থিম সং প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অপরদিকে মাদকবিরোধী স্লোগান ও দিবসের প্রতিপাদ্য লেখা ফেস্টুন, বিলবোর্ড দিয়ে ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো সুসজ্জিত করা হয়েছে। দেশের সকল সরকারি ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। এছাড়া বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পালিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মাদকবিরোধী র্যালি, আলোচনা সভা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন জনবহুল স্থানে মাদকবিরোধী লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ, মাদকবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাদকবিরোধী শর্টফিল্ম প্রদর্শন ইত্যাদি।
১৯৮৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪৭ তম অধিবেশনে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মাদকের অপব্যবহার রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং মাদকাসক্তির চিকিৎসার বিষয়ে সর্বসাধারণকে অবহিত ও উদ্ধুদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর জাতিসংঘ ঘোষিত ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও প্রতি বছর দিবসটি সরকারী উদ্যোগে পালিত হয়ে আসছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘মাদকের আগ্রাসন দৃশ্যমান, প্রতিরোধেই সমাধান।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available