মেহেদী হাসান তানিম, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: জরাজীর্ণ একমাত্র মাটির ঘরে মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামীও প্রতিবন্ধী তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রেবা বেগম। জনপ্রতিনিধিদের কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা বললেও মেলেনি কোনো সহায়তা। মাথার উপর ভেঙ্গে পড়া শঙ্কা নিয়ে মাটির ঘরেই দিন পার করছেন তিনি। এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় পরিবারে জুটেনি শীতবস্ত্র। ফলে জরাজীর্ণ মাটির ঘরে হিমেল বাতাস প্রবেশে ঘরে থাকা দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে। দিশেহারা মায়ের আর্তনাদ যেন দেখার কেউ নেই।
উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চিকুর মোড় গ্রামের বাসিন্দা রেবা বেগম। শ্বশুড়ের রেখে যাওয়া একখন্ড জমিতে মাটির ২২ হাত দৈর্ঘ্য ও ৮ হাত মাটির ঘরে থাকেন তিনি। মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী আলাল উদ্দিন পান প্রতিবন্ধী ভাতা। তিন সন্তানদির বড় ছেলে রনি (১৮) কাজ করেন রাজমিস্ত্রির। অপর দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে প্রতিবন্ধী ভাতাভুক্ত রুমি (১১) স্থানীয় হামলাইকোল সরকারি প্রাধমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েন। ছোট ছেলে রাহিমের বয়স ১৫ মাস।
অভাবের সংসারে বড় ছেলেকে পারেনি লেখাপড়া করাতে। বাবা ও মেয়ের প্রতিবন্ধী ভাতা আর বড় ছেলের সামান্য আয়ে কোন রকমে চলে তাদের সংসার। মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামীর চিকিৎসা ব্যয়, প্রতিবন্ধী মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে রেবাকে কাজ করতে হয় অন্যের বাড়িতে। একমাত্র বসতঘর ভেঙ্গে পড়ার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
ঘর নিমার্ণে নিজের অসহায়ত্বের কথা ইউনিয়ন পরিষদে শুনিয়ে ঘর নিমার্ণে মিলেনি কোনো সহায়তা। ফলে সেই ঘরে নিরুপায় হয়ে দিন কাটছে তাদের। রাতে ঘরে টিনের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা কুয়াশার পানি পড়ে। আর ভাঙ্গা জানালা আর দেয়ালের ফাঁটা স্থান দিয়ে প্রবেশ করা শীতের বাতাসে বড়ই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে তাদের থাকায়। স্বামী আর সন্তানদের কষ্ট আর সইতে পারছেন না তিনি। অবিলম্বে ঘর তৈরি করা অতীব জরুরী। কিন্তু তার কিছুই করার নাই। অভাব অনটনে খাদ্যই ঠিকমত জুটে না, আর ঘর নিমার্ণ!
প্রতিবেশি তসলিম, আসাদুল ও বাদশা বলেন, এরা বড়ই অসহায় পরিবার। জরাজীর্ণ ভাঙ্গা একমাত্র মাটির ঘরে পরিবারে সবাই থাকেন। বড় ছেলের রাজমিস্ত্রির আয়েই চলে তাদের সংসার। মানবেতর জীবনযাপন করা এই পরিবারে সামথ্য নাই ঘর নিমার্ণ করা। যেকোন সময়ে ঘর ভেঙ্গে পড়ে ঘটতে পারে প্রাণহারির ঘটনা।
রেবা বেগম আর্তনাদ করে বলেন, পেটে ঠিকমত দু’বেলা খাবার জুটে না। ঘর নিমার্ণ করতে টাকা কোথায় পাবো। একটা থাকার ঘর পেলে স্বামী-সন্তানাদি নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে দিন কাটাতে পারতাম। নিজের আত্নীয়-স্বজনরাও সাহায্যে এগিয়ে আসে নাই। জনপ্রতিনিধিদের কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা শুনিয়েও মিলে নাই সাহায্য। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বড়ই কষ্টে আছি। আমার এ আর্তনাদ গরীব ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।
এ বিষয়ে বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সুজা জানান, তার অসহায়ত্বে বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। কিন্তু ঘরের কোনো বরাদ্ধ নেই। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে সেই পরিবারকে আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছি। অচিরেই আমার পরিষদ থেকেও সেই পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবো।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available