শরীয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুরে এক তরুণকে ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দিয়ে লিবিয়া নিয়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। পরে দালাল চক্রের মাধ্যমে লিবিয়ার মাফিয়ারা তাকে আটকে রেখে নির্যাতন ও পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ হাতিয়ে নেয় বলেও জানা যায়। দালালের মাধ্যমে ২৭ লাখ টাকা দিলেও ওই তরুণের মুক্তি মিলেনি। তরুণকে ফিরে পেতে পরিবারের আকুতি।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের আগস্টে লিবিয়া দিয়ে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলার বিকেনগর (বড় কৃষ্ণনগর) ইউনিয়নের ছোবান্দি মাদবর কান্দি এলাকার আইয়ুব আলী মোল্লার ছেলে তরুণ রফিক মিয়ার পরিবারের কাছে থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় একই উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাচ্চু মাতুব্বর কান্দি এলাকার দালাল জসিম মাতুব্বর। পরে প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যায়। সেখানে তাদের রিসিভ করে ‘মানব পাচারকারী চক্রের’ বাংলাদেশি দুই সদস্য শফিক ও সালাম ।
তাঁরা লিবিয়া থেকে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে দালাল চক্র জসিম মাতুব্বর মাধ্যমে ভুক্তভোগী রফিক মিয়ার পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে মোট ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। দালাল জসিম মাতুব্বর ও তাঁর সঙ্গীরা মিলে ওই তরুণকে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
মাফিয়ারা তরুণ রফিককে জিম্মি করে লিবিয়ার একটি স্থানে ১ মাস ৪ দিন ধরে আটকে নির্যাতন করছে। এখন আরও ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে মাফিয়া চক্র। ওই টাকার জন্য মাফিয়া চক্র বাংলাদেশে রফিক মিয়ার পরিবার ও তাঁর আত্মীয় স্বজনদের মোবাইলফোনের মাধ্যমে ভিডিও কল করে জিম্মিদশা ও নির্যাতনের দৃশ্য দেখাচ্ছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রফিক মিয়ার বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা বাদি হয়ে জাজিরা থানায়, র্যাব, সেনাবাহিনী, আইন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবার সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।
ভুক্তভোগী রফিক মিয়ার বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা কান্না করে বলেন, দালাল জসিম মাতুব্বরের খেলনার দোকান ছিল। আমি তাঁর থেকে খেলনার মাল কিনে বিক্রি করতাম। একদিন জসিম মাতুব্বর বললো তিনি লিবিয়া লোক নেন! আমাকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে ছেলেকে লিবিয়া পাঠানোর জন্য বললেন। আমিও রাজি হয়ে দালাল জসিম মাতুব্বরকে ৫ লাখ টাকার দিয়ে ছেলেকে লিবিয়া পাঠিয়েছি। পরে আমাকে তিনি বলেন লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠাবে আবার ৮ লাখ টাকা নেন তিনি। পরে দালালরা লিবিয়ার মাফিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয় ছেলেকে। মাফিয়ারা আমার ছেলেকে জিম্মি করে রেখে নির্যাতন করে, সেই দৃশ্য মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও করে আমাদের কাছে পাঠায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম মৃধাসহ এলাকাবাসী জানায়, ভুল পথে দালালদের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে অসহায় পরিবারটি জমি ও বসতভিটা সব বিক্রি করেছে। তাছাড়া সুদ ও এনজিওর কাছ থেকে ঋণ এনে এখন পরিশোধ করতে পারছেন না। তাই দলালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এছাড়া ভুক্তভোগী রফিক মিয়াকে ফিরিয়ে আনাসহ পরিবার যেন সব অর্থ ফেরত পায় তাঁর দাবি করছি।
তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত দালাল জসিম মাতুব্বর বলেন, আমি রফিক মিয়াকে বিদেশ নেইনি। তবে আমার কাছে রফিক মিয়ার বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা টাকা জমা রেখেছিলেন। কারণ তিনি আমার হকার ছিলেন। তারা এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি কোন দালাল না এবং কোন মাফিয়ারও সঙ্গে জড়িত না। জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল-আমিন বলেন, আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available