মেহেরপুর থেকে নুরুজ্জামান পাভেল: দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়াতে গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মেহেরপুরের গাংনীর অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। তাদের প্রত্যেকে ধারদেনা করার পাশাপাশি সহায়-সম্বল বিক্রি করে দালালের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। ৪ মাস আগে মালয়েশিয়া গেলেও কাজ দেওয়ার পরিবর্তে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে তাদের। যেখানে খাবার, পানি সংকটে অনাহারে-অর্ধাহারে কোনো রকমে বেঁচে আছেন তারা।
জানা যায়, ভালো কাজ ও মোটা অঙ্কের বেতনের প্রলোভন দেখিয়েছিল দালালরা। তাদের খপ্পরে পড়ে সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কেউ দিয়েছেন জমি বন্ধক, কেউ সুদের উপর টাকা নিয়েছেন, কেউবা বিক্রি করেছেন জমিসহ মূল্যবান সম্পদ। এভাবে সংগ্রহ করা টাকা তুলে দিয়েছেন দালালদের হাতে। মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ পাওয়া তো দূরের কথা, এখন তারা বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।
এদিকে যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন তারা বাড়িতে এসে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় থাকা ছেলে ও পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করায় দুঃখের ছায়া নেমে এসেছে ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলোতেও।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের কেএনএসএইচ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান শিক্ষক মাজেদ মাস্টার, কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে ন্যাড়া, বালিয়াঘাট গ্রামের আনিসুল হক মাস্টারের ছেলে শোভন, সাহেবনগর গ্রামের সুরুজ ও তার ভাই আওয়াল এবং মুসা কলিমের মাধ্যমে ঢাকায় নাভিরা ও মুসাকলিম এন্টারপ্রাইজ এজেন্সির মাধ্যমে টাকা দিয়ে ভালো কাজের প্রলোভনে মালয়েশিয়ায় গেছেন তাদের স্বজনরা। সেখানে নিয়ে যাওয়ার ৪ মাসেও দালাল চক্রের সদস্যরা কোনো কাজ দিতে পারেনি। দালালদের পক্ষ থেকে প্রথমে খাবার ও পানি দেওয়া হলেও এখন তা বন্ধ করে দিয়েছে তারা। খাবার চাইলে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে দালাল চক্রের সদস্যরা।
ভুক্তভোগী তরুণদের অভিযোগ, গত বছর ৬ নভেম্বর একটি ফ্লাইটে ৫৪ জনকে মালয়েশিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নামার পর এজেন্সির লোকজন গাড়িতে করে একটি ভবনে নিয়ে তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেন। সেই ভবনের কয়েকটি কক্ষেই তারা আছেন। সেখানে এখন তারা ঘরের ভেতরেই নিদারুণ কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে দালাল চক্রের সদস্যদের সঙ্গে বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। এমনকি তাদের মুঠোফোন বন্ধ ও বাড়িঘর তালাবদ্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দালালদের খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি অসহায় পরিবারগুলোকে আইনগত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন গাংনী থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available