স্টাফ রিপোর্টার, ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
১৪ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জনকে ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেননি।
এর আগে ১৩ এপ্রিল শনিবার বিকেলে উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
স্থানীয়রা জানান, মাঝারদিয়া গ্রামে এলাকার প্রভাব বিস্তার নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হামিদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহ-সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাহিদুজ্জামান সাহিদের বিরোধ চলে আসছিল। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে সাহিদের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন ইউপি সদস্য কবির হোসেন ও হামিদের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন তার ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন।
সরেজমিনে গেলে প্রত্যক্ষদর্শী বলছে, ওই দুই গ্রুপের মধ্যে চলমান বিরোধের জেরধরে শনিবার বিকেলে উভয় গ্রুপের কয়েকশ লোক দেশীয় অস্ত্র ঢাল, কাতরা, ভেলা ও টেঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পুরো এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী চলে এ সংঘর্ষ। সংঘর্ষচলাকালীন সময়ে হামিদের সমর্থক বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারী ও আজিজ মোল্যার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-লুটপাট করা হয়।
এতে উভয় গ্রুপের অন্তত ২৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারী (৭২), আহাদ ব্যাপারী (৩২), শাখাওয়াত ব্যাপারী (২৫), মজিদ ব্যাপারী (৩০), আলমগীর ফকির (৩৮), আজিজ মোল্যা (৪৭), বাসার মোল্যা (৫৫), হাসিবুল মোল্যা (২২), হানিফ মোল্যা (৪২), সেন্টু ব্যাপারী (৩১), ফরিদ মোল্যা (৫০), চানমিয়া শেখ (৪০), মনির মোল্যা (২৫), আকবর শেখ (৩২), হৃদয় মোল্যা (২০), আমরান মোল্যা (২৮), রেজাউল শেখ (৫০) ও সুমন মোল্যাসহ (৩৫) অন্তত ২০ জনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
তবে সংঘর্ষের ঘটনায় এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। রবিবার দুপুরে হাবিবুর রহমান হামিদের ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন জানান, সাহিদ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। শনিবার বিকেলে সাহিদের সমর্থক ইউপি সদস্য কবির হোসেনের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারীর ওপর হামলা চালিয়ে তাঁর পায়ের রগ কেটে দেয়। তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় আমার দলের লোক ঠেকাতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়।
ইউপি সদস্য কবির হোসেন জানান, শনিবার বিকেলে ফারুকের সমর্থক বক্কর মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে আমার সমর্থক মনির ও সুমন মাঝারদিয়া বাজারে যাচ্ছিল। এ সময় তাদেরকে ধাওয়া দেয় ফারুক ও বক্কর মেম্বারের লোকজন। এ নিয়ে পরে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় আমাদের সমর্থক জালাল শিকদারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।
ফরিদপুরের সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৭ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখনো উভয় পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available