নিজস্ব প্রতিবেদক: ১ মে বিশ্ব শ্রমিক দিবসে রাজধানীতে শ্রম অধিকার র্যালি করেছে জাগ্রত শ্রমিক বাংলাদেশ। সংসদ থেকে স্থানীয় সরকার, শিল্প-কারখানা পরিচালনা পর্ষদ থেকে দেশের শাসনকাঠামোর সকল জায়গায় শ্রমিকদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিতসহ বেশকিছু দাবিতে শ্রম অধিকার র্যালি নামে রাজপথে পদযাত্রা করেছে সংগঠনটি।
বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা দল হিসেবে শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্নতা জানিয়ে তাদের অধিকারের লড়াইয়ে নেতৃত্বে দিতে জাগ্রত শ্রমিক বাংলাদেশ এই র্যালির আয়োজন করেছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শ্রম অধিকার র্যালি শুরু হয়ে রাজধানীর পল্টন থেকে বিজয়নগর ঘুরে পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। জাগ্রত শ্রমিক বাংলাদেশের আহ্বায়ক রুবেল উকিলের সভাপতিত্বে শ্রম অধিকার র্যালিতে জাগ্রত বাংলাদেশের সভাপতি আজমুল জিহাদ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নুরুল আমিন ভূঁঞাসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিতি ছিলেন।
এর আগে প্রেসক্লাবে শ্রম অধিকার যাত্রা পূর্ব সমাবেশে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিকদের জাগরণে, শ্রমিকদের উন্নয়নচিত্র অঙ্কনে আঁধারের মশাল হয়ে রাজপথে আজ আমরা। স্বাধীনতার এতো বছর পর আমার মেহনতি শ্রমিক ভাই ও বোনেরা অবহেলিত ও বঞ্চিত। স্বল্প মজুরি ও বেতন নিয়ে তারা জীবনযুদ্ধে হাঁপিয়ে উঠছে। শ্রমিক দিবসের এই দিনে আমার শ্রমজীবি ভাই-বোনদের সঙ্গে আছে জাগ্রত শ্রমিক বাংলাদেশ।
তারা বলেন, আপনারা জানেন এ দেশের ভাষা আন্দোলন থেকে ঊনষত্তরের গণআন্দোলন, স্বাধীনতার যুদ্ধ থেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, আপামর জনতার সঙ্গে সামনের সারিতে আন্দোলন সংগ্রামে বারবার গর্জে উঠেছিলো শ্রমিক ভাই ও বোনেরা। শুধু তা-ই নয়, শিকাগোর সেইদিনের সেই শ্রমিকদের মতো আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেও শোষক শ্রেণির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আমার শ্রমিক ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন। জনযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করলাম আমরা। দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে, রেমিটেন্সের টাকায় সমৃদ্ধ হয়েছে দেশ। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত হওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে ধাবমান। কিন্তু আমার শ্রমজীবি মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছি, তাদের জীবনমানের তো কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। বরঞ্চ তাদের প্রতি শোষন যেনো আরও বেড়ে গেছে। এই ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে তাদের বেতন নেই, মজুরি নেই। স্বল্প মজুরিতে উচ্চ দ্রব্যমূল্যে নাজেহাল আমার শ্রমিক শ্রেণির মানুষ।
এখনও আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে কাটাতে হয় শ্রমিককে। শোসক শ্রেণির গুলির সামনে বুক পেতে দিতে হয় দু’মুঠো আহারের জন্য। আমার শ্রমিক মজুর ভাইদের প্রতি এই বঞ্চনা চলতে দেওয়া যায় না।
এ সময় জাগ্রত বাংলাদেশের সভাপতি আজমুল জিহাদ জাতীয় প্রেসক্লাবে শ্রম অধিকার র্যালি পূর্ব সমাবেশে বলেন, আমরা স্বাধীন হয়েছি শ্রম বৈষম্য নিরসনের কথা বলে, কিন্তু আজ শ্রম বৈষম্য স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি। যে শ্রমিকের উৎপাদনে এতো এতো উন্নয়ন, তার জীবন মানের এতো দূরাবস্থা কেন? কারণ আজও শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত হয়নি। আমরা ব্রিটিশ খেদিয়েছি, পাকিস্তানি হানাদার তাড়িয়েছি, এখন জিম্মি হয়ে আছি রাবণের উত্তরসূরিদের কাছে। এখনি সময় হে বাংলার শ্রমিক জাগ্রত হও, লড়াই করো, শ্রম ও শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করো।
এ সময় জাগ্রত শ্রমিক বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
১. সংসদ থেকে স্থানীয় সরকার, শিল্প-কারখানা পরিচালনা পর্ষদ থেকে দেশের শাসনকাঠামোর সকল জায়গায় শ্রমিকদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
২. সময়পযোগী মজুরি কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। ৬ মাস অন্তর শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। এটি হতে হবে মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে দুই শতাংশ বেশি হারে।
৩. শ্রমিকের নিরাপদ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কায়িক শ্রমিকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।
৪. ‘সার্ভিস বেনিফিট’ হিসেবে প্রত্যেক বছরের জন্য ১ মাসের বেতন প্রদান করতে হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available