• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৯:৪০:৪৯ (23-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শনিবার ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৯:৪০:৪৯ (23-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

মতামত

অনন্য এক আয়োজনে নন্দিত ‘জলছবি’র পঞ্চম সংখ্যা

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সকাল ১১:৫৮:২৪

অনন্য এক আয়োজনে নন্দিত ‘জলছবি’র পঞ্চম সংখ্যা

রাসেল আবদুর রহমান: ‘জলছবি’ এক শৈল্পিক নাম। চিত্তাকর্ষক শিল্প-সাহিত্যের কাগজ। ‘লিটল-ম্যাগ’ বললে অনেকের স্মৃতির পর্দায় ভেসে উঠবে এই নামের সাহিত্য পত্রিকাটি। শিল্প-সাহিত্যের সাথে জড়িত এমন প্রায় সবার কাছেই বেশ পরিচিত এক নাম। যারা সাহিত্যের পাঠক তাদের কাছেও কম-বেশি এই সাহিত্য পত্রিকাটি পরিচিত। মাসখানেক হলো ‘জলছবি’র পঞ্চম সংখ্যা হাতে পেলাম। যদিও এটি অক্টোবর ২০২৩ এ প্রকাশিত হয়েছে। ‘জলছবি’র আগের সংখ্যাগুলোও পড়েছি। তবে এই সংখ্যাটি পড়তে গিয়ে আলাদা এক অনুরণনে শিহরিত হয়েছি। পূর্বের সংখ্যার উজ্জ্বলতাকে ছাপিয়ে এই সংখ্যার সাহিত্য নতুন এক দ্যুতি ছড়াচ্ছে। ‘জলছবি’র সম্পাদক কবি জামসেদ ওয়াজেদ প্রামাণ করেছেন, সংখ্যা প্রকাশে দীর্ঘ সময় নেয়া মানে ঘুমিয়ে পড়া নয়। নতুন চমক পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার নিরালস প্রচেষ্টা। 

সাহিত্যে পাঠকের আকাঙ্ক্ষার খোরাক যোগানো কম কঠিন কাজ নয়। তারপর এই ইথারের নানাবিধ সহজলভ্য বাজারে মানুষকে মুদ্রিত বইয়ে টেনে নিয়ে আসা শুধু চ্যালেঞ্জের নয়, একটা অসাধ্য কাজও বটে। কেননা, মানুষের হাতের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট মস্তিস্ককে অস্থির করে রেখেছে। মানুষ এখন কোথাও থামতে জানে না। যা দেখছে, তার চেয়ে আরো বেশি কিছু দেখতে চাওয়ার আশায় ব্যাকুল হয়ে ইথার রাজ্যে হন্য হয়ে ছুটছে। কিন্তু কী দেখার বাসনা তার তা সে জানে না। কী পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় এমন আকুল হয়েছে সেটাও তার ধারণার বাইরে। এমন সময় সাহিত্যের কাগজে কেউ যদি মনোনিবেশ করতে পারে তবে সে কাগজটা সত্যিই চমৎকার ও সুন্দরের যথার্থ সমন্বায়ক। মনের খোরাক তো বটেই। এই অস্থির সময়ে ‘জলছবি’ আমার মনোযোগ কেড়েছে। এখানে সম্পাদিত লেখাগুলো আমাকে ‘জলছবি’কে আলিঙ্গন করতে বাধ্য করেছে।

সম্পাদক লেখা নির্বাচনে দারুণ মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। শুরু করেছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘সাহিত্যে ছোটগল্প’ প্রবন্ধের মাধ্যমে। একজন গল্পকার হিসেবে যদি কেউ এই রচনাটি পড়েন তবে তার লেখার শক্তিকে ঋদ্ধ করতে পারবেন। অন্যদিকে একজন ছোটগল্পের পাঠককে গল্পপাঠের স্বাদ বাড়িয়ে দিবে। ছোটগল্পের যে নিজেস্ব কাঠামো বা আলাদ বৈশিষ্ট্য ও উত্তেজনা আছে তা পাঠককে ধরিয়ে দিয়ে গল্পের প্রকৃত রসে পরিতৃপ্ত করবে। গল্পকারের মনন বিচার করতেও সক্ষম হবেন। শুধু এখানেই নয় ‘বাংলা কবিতায় নারী ও নারীর শরীরী বাস্তবতা’ শীর্ষক অপর এক প্রবন্ধে বাংলা সাহিত্যে বাংলা কবিতার শুরু থেকে চলমান হালের কবিদের কবিতায় নারী রসের রসায়ন তুলে ধরেছেন প্রবান্ধিক। যে প্রবন্ধ আপনাকে বাংলা কবিতা পাঠে ও এর গোপনঘরে মগ্ন করবে। নিজের অজান্তেই খুঁজে বেড়াবেন বাংলা সাহিত্যের এমন সব কবিতা ও কবিকে। তৃষ্ণার্ত হবে মন কবিতার প্রেমে ও কামে। নতুন কবিতা প্রেমিকদের ধারণায় জোয়ার আসবে নতুন চিন্তার। শব্দপোশাকের আড়ালে দেখতে সক্ষম হবেন কবিতায় কামের নগ্ন শরীর। বুঝতে পারবেন, শব্দের ছলনায় কীভাবে বাক্যের গতরে চিত্রায়িত হয় জীবন্ত মানুষের ছবি এবং ভাষার তকমায় মুখরিত হয় মানব ক্রিয়াকালাপ। এছাড়াও বেশকিছু প্রথিতযশা ও নবীন প্রাবন্ধিকের ভিন্ন স্বাদের প্রবন্ধ রয়েছে এই অক্টোবরের সংখ্যায়।

লেখা সাজানোর বিন্যাস আপনাকে ‘জলছবি’র এই সংখ্যাটা হাতে রাখতে খানিকটা বাধ্য করবে। প্রবন্ধ পড়ে বিরক্তি ধরার আগেই চোখের সামনে চলে আসবে কবিতার পাতা। কবিতার স্বাদ থাকতে থাকতেই আপনি ঢুকে পড়বেন আলোচনা বা সমালোচনা সাহিত্যে। ক্ষণে স্বাদের বদল হচ্ছে তাই পড়ার রুচিতে বিরক্তি আসে না। প্রসঙ্গ বদলের জন্য পড়তে পড়তে চিন্তার বদল ঘটে। ফলে টানা লেগে থাকা যায় এই কাগজের সাথে। সম্পাদকের এই নান্দনিকতা প্রশংসার দাবিদার। তাঁর শৈল্পিক মননের বহিঃপ্রকাশ। এমন কাজ শুধু নান্দনিক চিন্তার মানুষের পক্ষে সম্ভব।

গল্প চয়নের ক্ষেত্রে সম্পাদকের রুচির তারিফ করতে হয়। শুধু লেখকের নাম দেখে গল্প ছাপেননি তিনি। সেটা গল্প পড়তে পড়তেই বুঝতে পারবেন যেকোন পাঠক। প্রখ্যাত কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের ‘আন্ধারমানিকে ডুব সাঁতার’ নামের রোমাঞ্চকর এক প্রেম অথবা অনৈতিক কিন্তু বিধিসম্মত প্রেমের গল্প দিয়ে গল্পের জগৎ শুরু করলেও পরবর্তী গল্পের প্রসঙ্গ কিন্তু আলাদা বিষয়ের। অর্থাৎ একই রকম প্রসঙ্গের বা স্বাদের গল্পে সাজাননি। প্রত্যেকটি গল্পের প্লট আলাদা বিষয়ের। এমন বিষয় সবারই মনঃপুত হয়। বৈচিত্র্য মানব মনের এক অবাঞ্ছানীয় আকাঙ্ক্ষা। বৈচিত্র্য না পেলে মানুষের মন সেখানে নোঙ্গর ফেলে না। মানব মস্তিস্ক একই বিষয়ের একাধিক জিনিসে আনন্দের সিগনাল পাঠায় না। ফলে সেসব জিনিস থেকে মানুষ দ্রুত বের হয়ে পড়েন বা সরে যান। সম্পাদক গল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা উতরে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

বাংলা সাহিত্যে কবিতার আধিপত্য অনেক বেশি। এর কারণটাও যৌক্তিক, সাহিত্যের প্রথম সন্তানই হলো কবিতা। সব বড়দেরই একটা প্রকট ক্ষমতা আছে। কবিতার তাই। ফলে সাহিত্যের যেকোন প্রকাশনায় কবিতার উপস্থিতি বেশি থাকবে এটা স্বাভাবিক। আর এ বিষয়টি কম বেশি সবারই জানা। তবে বেশি কবিতা ছাপা তখনই অর্থবহ হয় যখন সেসব কবিতা পাঠকের মনে দাগ কাটতে পারে। এমন কবিতা নির্বাচন করা বেশ মুশকিল। কবিতা জনে জনে আলাদা আলাদ পোশাক খুলে আলাদা রূপ দেখায়। যে কবিতা কারো চোখে নগ্ন সেই কবিতাই আবার কারো কাছে মার্জিত পোশাকে ধরা দেয়। যে কবিতা কারো কাছে কোনো অর্থ বহন করে না আবার সেই কবিতাই কারো জীবনকে ঘুরিয়ে দেয়, বদলে দেয়। একটা কবিতা কাউকে হাসাতে পারে আবার কাউকে কাঁদতেও পারে। কবিতা এমনই। তাই কবিতা নির্বাচন করা আর গভীর সুদ্রের নিচের রহস্য উন্মোচন করা প্রায় একই রকম। তবে সম্পাদকগণ যদি কবিতার বৈশিষ্ট্য লক্ষ করে ছাপার জন্য নির্বাচন করেন তবে তা পাঠকের কাছে যেভাবেই ধরা দিক না কেন, পাঠককে হতাশ করবে না। বোধের বেদি নাড়াবেই। পাঠকের মননকে খামচে ধরবেই। আর এমনটা হলে একজন সম্পাদক কবিতা ছেপে নিজেকে ধন্য মনে করতে পারেন। নিজের মেধা ও শ্রমকে স্বার্থক বলে বিবেচনা করতে পারেন। পাঠকের চিত্তকে কবিতামুখী করতে ভূমিকা রাখতে পারবেন। এই সংখ্যায় গ্রন্থিত কবিতা পড়লে আমার দাবির যথার্থতা খানিকটা হলেও উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। খ্যাতিমান ও অনেক তরুণ কবির কবিতা স্থান পেয়েছে এই সংখ্যায়। সময় নিয়ে সবগুলো কবিতা যদি কেউ পড়েন তবে কবিতা সময়ের স্রোতের সাথে যে বদলে নিচ্ছে তার কাঠামো, রূপ, বিন্যাস ও ভাবনার বিষয় তা সহজে অনুমান করতে পারবেন। সাথে কবিতা তৃষ্ণাও জন্মাবে।
সাহিত্যের ছোট কাগজের প্রথা অনুযায়ী, একটি উপন্যাসকেও ঠাঁই দিয়েছেন। আসলে বলতে গেলে, একটি স্বার্থক পুরো উপন্যাস কোন কাগজের একটি সংখ্যায় সম্পূর্ণ ছাপা কখনো সম্ভব না। তবুও নিয়ম রক্ষার্থে যে উপন্যাসটি ছেপেছেন, তা বেশ সুখপাঠ্য। নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত একটি সামাজিক উপন্যাস। উপন্যসটি সম্পর্কে বিস্তারিত বা চৌম্বকাংশ লিখতে চাচ্ছি না কারণ তাতে সম্পূর্ণ উনস্যাটি পড়ে দেখার আগ্রহ কারো কারো হ্রাস পেতে পারে। তবে একথাটি জানিয়ে দিচ্ছি, কেউ যদি নোয়াখালীর ভাষায় আকৃষ্ট হতে চান তবে নিঃসন্দেহে পড়তে পারেন। আনন্দ-বেদনার একটা প্লটে নিজেকে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও নিমজ্জিত করতে পারবেন।

এই সংখ্যায় অনুবাদ কবিতাও আছে। কবিতাগুলোর অনুবাদ আপনাকে মূল কবিতার স্বাদ দিবে। বেশ পোক্ত অনুবাদ। কবিতার সুন্দর অনুবদ করা বেশ কঠিনই। রচিত কবিতার মূলভাষা না জেনে অন্য কোনো ভাষা থেকে কবিতা অনুবাদ করলে তা মূল কবিতা থেকে অনেক দূরে সরে যায়। তবে ‘জলছবি’র এই সংখায় ছাপা কবিতা পড়ে তেমনটা লাগেনি। অনুবাদে কবিতার ভাষা ও ভাবের দারুণ প্রবহমানতা বিদ্যমান। পানসে পানসে লাগেনি। কবিতাস্বাদ বিবর্জিত হয়নি।

ভ্রমণ কাহিনিও বেশ চমৎকার লেগেছে। লেখক স্থান ও স্থাপনার সৌন্দর্য তুলে ধরার সাথে ইতিহাস ও ঐতিহ্যও সুন্দরভাবে বর্ণনা করছেন, যা একই সাথে জ্ঞানের ভাণ্ডারে তথ্য জমাবে এবং ভ্রমণ পিপাসা জন্মাবে। এছাড়ও বই আলোচনাও সুন্দর হয়েছে। আলোচিত বই পড়ার তৃষ্ণা জন্মিয়েছে।

যে বিষয়ের কথা এখনো বলা হয়নি সেটা হলো ছড়া। ছড়া ছাড়া কী আর চলে! জন্মের পর আমাদের সাহিত্যে প্রথম পরিচয় ঘটছে ছড়ায়। কথা বলতে শেখার আগেই আমাদের মায়েরা ছড়া শোনাতে শুরু করেন। তাই আমাদের জীবনে ও সাহিত্যে ছড়ার প্রভাব সব থেকে আলাদা। ছড়া ছাড়া সাহিত্যের আসর বা আয়োজন পূর্ণ হয় না। সুতারং ছড়া থাকবে না এই সংখ্যায় এটা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। বেশ মজার মজার ছড়া আছে এই সংখ্যায়। তালে তালে অতুলনীয় আনন্দ পাবেন ছড়াপ্রিয়রা। সাথে আপনার ভাবনাকে নাড়াবেও। একটু তুলে না ধরলে সেটা হবে নিজের সাথে কার্পণ্য। চলুন একটু পড়ি:

‘আমি ছাড়া তুমি নাকি জিততে গিয়ে হেরে যাও
আমি ছাড়া তুমি নাকি দুনিয়াটাই ছেড়ে যাও!
আমি ছাড়া তবেÑ-
অন্য কারো হবে কেন?
আমার কাছে আসতে গিয়ে আবার কেন দূরে যাও,
আমার দিকে হাত বাড়িয়ে পাখনা মেলে উড়ে যাও?’
          -আতিক হেলাল (আমি ছাড়া)

ইসলামী সাহিত্য নামেও এই সংখ্যায় সাহিত্য ছাপা হয়েছে। এক কথায় সম্পাদক পরিপূর্ণ একটা সাহিত্য সংখ্যা করার প্রায়াস ও চেষ্টা করছেন। সত্যিই এমন প্রচেষ্টা আনন্দের। আর এই আনন্দ শুধু প্রকাশকের একার নয়। সকল পাঠকের। সত্যিই পাঠক হিসেবে আমি আনন্দিত।

জলছবির এই সংখ্যাটির মূল্য মাত্র ৪০০ টাকা। পাওয়া যাচ্ছে বইমেলা লিটলম্যাগ চত্বরে। ‘জলছবি’ স্টল নং-৭২-এ। এছাড়াও পাওয়া যাবে শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের পাঠশালা, পাঠক সমাবেশ, জনান্তিক, কাঁটাবন মোড় কবিতা ক্যাফে, মালিবাগ মোড় হোসাফ টাওয়ারে সাহিত্যদেশ প্রকাশনী এবং ফেনী স্টেশন মোড় রোড ফিরোজ লাইব্রেরিতে।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ