কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সহিংসতায় গুরুত্বর আহত বিজয়ী চেয়ারম্যান আ. মান্নান খানের এক সমর্থক মারা গেছেন। নিহতের নাম তরিকুল ইসলাম তারিক (৩৫)। ২৬ মে রোববার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের বড় ভাই তারিকুল ইসলাম টরিক।
এর আগে ২১ মে মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ভোট গণনার সময় চাপড়া ইউনিয়নের জয়নাবাদ কলোনীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত তারিকসহ আহত হয় তিন জন। তারিক চাপড়া ইউনিয়নের জয়নাবাদ মন্ডলপাড়া এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে।
তিনি বিজয়ী চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খানের আনারস প্রতীকের সমর্থক ছিলেন। এছাড়া তারিক চাপড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
হামলার ঘটনায় ২৩ মে বৃহস্পতিবার নিহতের বড় ভাই তরিকুল ইসলাম টরিক বাদী হয়ে মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে কুমারখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আরো ৫ থেকে ৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের জয়নাবাদ কলোনীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আধিপত্য নিয়ে সকাল থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। ভোট গণনার সময় গোলাম মোরশেদ পিটারের সমর্থক আনিসুর রহমান লালের নেতৃত্বে মধু সাদ্দামসহ ১৫ থেকে ২০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মান্নান খানের সমর্থকদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে তারিকুল ইসলাম তারিক, তার বড় ভাই তারিকুল ইসলাম টরিক, রাশেদ ও নাজিরুল ইসলাম গুরুত্বর আহত হয়। আহতদের কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তারিকের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
নিহতের বড় ভাই তারিকুল ইসলাম টরিক বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের পেছনে যাদের মদদ আছে তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মামলার প্রধান আসামি সন্ত্রাসী লালসহ মদদ দাতাদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
কুমারখালী উপজেলা পরিষদের বিজয়ী চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান বলেন, নিহত তারিক আমার কর্মী। এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে চেয়ারম্যান এনামুল হক মন্জুর নির্দেশে। আমি নির্দেশদাতাসহ হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক মন্জু বলেন, নির্বাচনের দিন আমি ঘটনাস্থল ছিলাম না এবং ঘটনার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি জানতাম না। রাজনৈতিক বিরোধীতার স্বার্থে আমাকে জড়ানো হচ্ছে।
হামলাকারীরা মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু আমি দেখি নাই বা জানি না, সেহেতু আমি কীভাবে বলবো। আর আমি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোটরসাইকেলর প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করেছি। এই সন্দেহ থেকে হয়তো বা তিনি আমার নামে অভিযোগ তুলছেন।
কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক একি ইউনিয়নের বাসিন্দা আশাদুর রহমান আশা বলেন, আনিসুর রহমান লাল একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং মাদক কারবারিসহ নানা অপকর্মের হোতা। এই লাল বঙ্গবন্ধুর জামাতা ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামে ক্লাব বানিয়ে সেই ক্লাব ঘরের মধ্যে নানান অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে। চাপড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক মন্জুর অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ার কারণে কেউ তাকে কিছু বলতে সাহস পায় না।
হামলাকারীরা বাড়ি ঘরে না থাকায় এবং মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ার কারণে কারোর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ আকিবুল ইসলাম বলেন, তারিক মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। গত ২৩ মে নিহতের ভাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি, তবে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available