হানিফ মেহমুদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরমোহনপুর এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তারাবির নামাজের সময় এক যুবককে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা করেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
আহত যুবক বর্তমানে ঢাকায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ৯ মার্চ জেলা শহরের চরমোহনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন চরমোহনপুরের লাহাপাড়া গ্রামের মো. আশরাফুলের ছেলে রাজমিস্ত্রী মো. ইমন। এ ঘটনায় আহত ইমনের পরিবার ও এলাকাবাসী কিশোর গ্যাংয়ের আতঙ্কে দিন পার করছেন।
জানা যায়, গত ৬ মাস আগে ক্যারাম খেলাকে কেন্দ্র করে চরমোহনপুর এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের দুই জন আহত হয়েছেন। আহত দুই জনের একজন সদর উপজেলার চরমোহনপুরের লাহাপাড়া গ্রামের মো. আশরাফুলের ছেলে মো. ইমন এবং অপরজন চরমোহনপুরের নিচপাড়া গ্রামের মো. এফতাজ আলীর ছেলে মো. ইব্রাহিম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ছয়মাস আগে ইশারুল ও ইমনের মধ্যে কেরাম খেলা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে ইমনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে মীমাংসা করে দেয়। কিন্তু সালিশের ৬ মাস পরে এরই ধারাবাহিকতায় ৯ মার্চ রোববার তারাবির নামাজের সময় ইমনকে একা পেয়ে বেধড়ক পিটুনি দেয় এবং ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে মাথায় আঘাত করে।
জানা যায়, ইমনকে কোপানোর সময় চিৎকার করলে ছুটে আসেন আশেপাশের লোকজন ও পাশেই থাকা মসজিদের মুসল্লীরা। পরে মসজিদের মুসল্লী ও স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে চিকিৎসকরা। বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে ইমন।
প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী বলেন, হঠাৎ করে চিৎকার শুনে সর্বপ্রথম ছুটে আসি। এসে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ইমন। তাকে জিজ্ঞেস করি, কি হয়েছে, সে শুধু বলে আমাকে মেরে ফেলবে। তারা লুকিয়ে আছে, আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে মসজিদের মুসল্লীরা আসলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, ৬ মাস আগে বিরোধ সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। কিন্তু এর পরেও ইসারুলের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং সদস্যরা রাতের অন্ধকারে তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। ধরালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে মাথায় আঘাত করে। আশপাশের মুসল্লীরা তার চিৎকারে ছুটে আসলে পালিয়ে যায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা।
আহত ইমনের বোন শ্যামলী খাতুন বলেন, আমার ভাইয়ের সাথে কোনো বিরোধ ছিল না কারো। এলাকার দুইটি পক্ষের ঝামেলা হয়েছিল সেটিও প্রায় ৬ মাস আগে। এরপর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ তা সমাধান করেও দেয়। কিন্তু হঠাৎ ইসারুলের নেতৃত্বে আমার ভাইয়ের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। এই হামলার পর আমরা এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
স্থানীয় বাসিন্দা তারেক আজিজ বলেন, একটি মীমাংসিত বিষয় নিয়ে উল্টো ইমনের পরিবারকে হয়রানি করতে ইসারুলের পরিবার ও তার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নানারকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এমনকি তারাই মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। আমরা এলাকায় শান্তি চাই। স্থানীয় প্রশাসনের নিকট অনুরোধ, দ্রুত হত্যাচেষ্টাকারীদের আটক করে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতিউর বলেন, প্রাথমিকভাবে মারামারির সত্যতা পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে ইমনের বড় ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available