রংপুর ব্যুরো: ২ আগস্ট বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুর সফরের কথা রয়েছে। রংপুর সফরে প্রধানমন্ত্রী ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকার ২৭ প্রকল্পের উদ্বোধন এবং নতুন আরও ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর করবেন বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর জেলা প্রশাসক মো. মোবাশ্বের হাসান।
রংপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে কাজ শেষ হওয়া শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিং পুল, পীরগঞ্জ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, পালিচড়া স্টেডিয়াম, রংপুর মেডিকেল কলেজ মাল্টিপারপাস ভবন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে ১০ শয্যা বিশিষ্ট বেগম রোকেয়া মর্ডাণ হাসপাতালের উদ্বোধন করবেন বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর আরও উদ্বোধনের কথা রয়েছে নলেয়া নদী পুন:খনন, আলাইকুমারী নদী পুন:খন, পীরগাছায় ৫৭৯ মি. সড়ক, খালাশপীর জিসি সড়ক পুনর্বাসন, ভায়ারহাট সড়ক পুনর্বাসন, ঘাঘট নদীর উপর ৯৬ মিটার পিএসসি গার্ডার বিজ্র নির্মাণ, জিসি-কাকিনা আরএইডি সড়কে ৪০ মি. আরসিসি ভেরিয়েবল ডেপথ গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, তিনতলা পল্লীমারী সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম ফ্লাড শেল্টার নির্মাণ, সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রাসফন্ট প্লান্ট ও স্টোর ইয়ার্ড নির্মাণ, হেলেঞ্চা ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, চতরা ইউনিয়ন ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, খালাশপীর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, মাদারগঞ্জ ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, পাটোয়া কামরী বিল পুনঃখনন, চিতলী বিল পুনঃখনন, রংপুর সিটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, নৈমুন্না বিল পুনঃখনন ও ভারাদহ বিল পুনঃখননের
অন্যদিকে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, রংপুর জেলা বিটাক, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অফিস এবং লেডিস হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে তিনি এসব উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। টানা ৩ বার ক্ষমতায় থেকে প্রধানমন্ত্রী রংপুরকে যেভাবে উন্নয়নের মোড়কে সাজিয়েছেন, তা বিগত কোনো সরকার করতে পারেনি। এখন মঙ্গাপীড়িত রংপুর বলা হয় না, কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিশ্রুতি পূরণের মধ্য দিয়ে মঙ্গা দূর করেছেন।
রাজনীতি ও উন্নয়ন বিশ্লেষকরা বলছেন, রংপুরের মহাসমাবেশ থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, রংপুর-লালমনিরহাট-পাটগ্রাম-বুড়িমারি মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তর, রংপুরে আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ ও ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসলে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগে পক্ষে একটি বড় ধরণের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের কাছে রংপুরের উন্নয়নে শেখ হাসিনা হয়ে উঠবেন ঈর্শ্বনীয় উদাহরণ।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উন্নয়ন বিশ্লেষক উমর ফারুক বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দিকে তাকালে রংপুর বিভাগের উন্নয়ন বৈষম্যটা ফুটে উঠে। এই অঞ্চলের মানুষের জন্য উন্নয়নও বরাদ্দ কম, সরকারের কোনো মেগা প্রকল্প নেই। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর সফরে পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগকে এগিয়ে নিতে আরও বেশি উন্নয়নের ঘোষণা আসুক। আমরা উত্তরের টেকসই উন্নয়নে বড় ঘোষণার প্রত্যাশা করছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের সুপারিশ ও চাওয়া থাকবে- রংপুর বিভাগ উন্নয়ন বোর্ড গঠন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার জন্য অর্থ বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন, রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বন্ধ চিনিকল চালু ও ৪ টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অর্থ বরাদ্দ, আলাদা শিল্প, কর, ভ্যাট, শুল্ক ও ঋণনীতি ঘোষণা, রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ওয়াসা গঠন, রংপুর সিটি করপোরেশনে প্রয়োজনীয় ও সম্মানজনক বাজেট বরাদ্দ, কর্মসংস্থানভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ।
রাজনীতি ও উন্নয়ন গবেষক রিয়াদ আনোয়ার শুভ বলেন, ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে এক জনসভায় জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে পাশে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, রংপুরের সার্বিক উন্নয়নের সকল দায়িত্ব আমার কাঁধে নিলাম। পুত্রবধু হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব তো আছে। এক যুগ পরে এসে আমরা তার সে কথার বাস্তবায়ন দেখতে পেলাম। স্বাধীনতার পর রংপুরের যে উন্নয়ন হয়েছে তার প্রায় সবটাই বিগত মহাজোট ও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে। শুধু ২ টি তিস্তা সড়ক সেতুর কথা ধরলেই বলা যায়, তিস্তা নদীর উপরর ২টি সড়ক সেতু নির্মাণ এ অঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
এদিকে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুরের মহাসমাবেশ ঘিরে রংপুর বিভাগ আওয়ামী লীগ এখন উজ্জীবিত। এ মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করে বিরোধী জোটের মাঠের আন্দোলন মোকাবেলা ও রংপুর বিভাগকে আওয়ামী লীগের ঘাটিতে রুপান্তরের স্বপ্ন নেতাকর্মীদের।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available