গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: কৃষক আব্দুল আলিমের খেতজুড়ে রঙিন ফুলকপির শোভা পাচ্ছে। শুধু হলুদ কিংবা বেগুনি কুলকপি নয়, এই কৃষকের সবজি খেতে আছে রঙিন বাঁধাকপি, বিষমুক্ত ক্যাপসিকাম, বারি-১২ জাতের রঙিন বেগুনও। অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এসব সবজির দামও বেশি।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে চলতি মওসুমে কৃষক আব্দুল আলিমের ১৭ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক শীতকালীন এসব সবজি চাষ করা হয়েছে। ২০ হাজার টাকা ব্যায়ে আব্দুল আলিমের খেতে সবজি উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কৃষিতে তার এমন সাফল্যে এলাকায় সাড়া পড়ে গেছে। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বিলকাঠোর গ্রামে আব্দুল আলিমের বাড়ি। সেখানেই তার এই বিচিত্র সবজি খেত।
যেভাবে শুরু রঙিন সবজি চাষ
কৃষিতে ভিন্নতা আনতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। তারমধ্যে কৃষক আব্দুল আলিমের সবজি খেত অন্যতম। কৃষি বিভাগ বলছে, স্বল্প ব্যায়ে বিষমুক্ত উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষক আব্দুল আলিমের খেতে পরীক্ষামূলক নানা জাতের সবজি চাষ করা হয়েছে। কৃষক আব্দুল আলিম নাটোর এবং বগুড়ায় কৃষির উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে কৃষি অফিসের অনুদানে নাটোর জেলায় এবারই প্রথম পলিনেটের মাধ্যমে বারি-১২ জাতের বেগুন, দুইজাতের রঙিন ফুলকপি, বেগুনি রঙের বাঁধাকপি, উন্নতজাতের মূলা এবং উচ্চ ফলনশীল ক্যাপসিকামের ২ হাজার ২০০ বীজ বপন করেছিলেন তিনি। এরপর চারা গজালে প্রক্রিয়ামতো রোপণ করেন। এতে ফলও পেয়েছেন ভালো।
রঙিন সবজির দামে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন
কৃষক আব্দুল আলিম জানান, নাটোর জেলার মধ্যে তার খেতেই এই প্রথম রঙিন বিষমুক্ত সবজি চাষ করা হয়েছে। বাজারের সাধারণ টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকামের দাম বেশি। চারা রোপণের পর থেকে পরবর্তী ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যেই এসব সবজি বিপণন যোগ্য হয়েছে। তার খেতের রঙিন ফুলকপি এবং বাঁধাকপি এবার আকার ভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে খুচরা বিক্রি করেছেন। প্রতিটি গাছে এক কেজির ওপরে কপির ফলন হয়েছে। অথচ, সাধারণ ফুলকপির বর্তমান বাজার দর ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অল্প সময়ে স্বল্প ব্যয়ে তিনি ১৭ শতাংশ জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, টমেটো এবং ক্যাপসিকাম উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার। এর মধ্যে ক্যাপসিকাম প্রতিকেজি বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে।
সারা ফেলেছে বিচিত্র এসব সবজি
কম সময়ে সীমিত ব্যয়ে রঙিন এসব সবজি চাষ করা যায়। ফলনও হয় প্রত্যাশার তুলনায় বেশি। খেতে স্বসাদু হওয়ায় বাজারে এসব সবজির চাহিদা বেশি। দামও ভালো। একারণে আগামী মওসুমে শীতকালীন এসব সবজি চাষের জন্য কৃষি অফিসের আগাম পরামর্শ নিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে এসব সবজি চাষ শুরু হয়েছে। নাটোর জেলায় গুরুদাসপুরের আব্দুল আলিমের খেতেই প্রথম চাষ করা হয়েছে ভিন্নজাতের সবজি। বাণিজ্যিকভাবে বিপণন হলেও জেলাজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়নি। সাদা সবজির চেয়ে রঙিন এসব সবজির পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। দেখতেও সুন্দর। দামও ভালা। তাই বাণিজ্যিক চাষ জেলাজুড়ে ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হারুনর রশীদ জানান, রঙিন এসব সবজি চাষে জৈব সারের ব্যবহার হচ্ছে। একারণে ক্ষতিকারক রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমছে। তাছাড়া রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। স্থানীয় বাজারে এর প্রচুর চাহিদাও রয়েছে।
গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় বাজারের সবজি বিক্রেতারা বলেন, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন আসায় সাধারণ সবজির চাহিদা কমেছে। দাম বেশি হলেও রঙিন সবজি কিনছেন মানুষ। এ কারণে আব্দুল আলিমের খেতে গিয়ে তারা এসব সবজি পাইকারি দরে ক্রয় করে বাজারে আনছেন।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, নাটোর জেলায় প্রথম কৃষক আব্দুল আলিম রঙ্গিন ফুলকপিসহ অন্যান্য সবজি চাষ করেছেন। এই ফসল চাষাবাদে রাসায়নিক সার-কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনি। এই সবজি চাষে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করায় ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তারা সবার আস্থা অর্জন করেছেন আব্দুল আলিম।
তিনি বলেন, রঙ্গিন ফুলকপিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। রঙিন এসব সবজিতে পঁচিশ গুণ বেশি ভিটামিন এ উপাদান থাকে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available