বিশেষ প্রতিনিধি: দেশের রফতানি বাড়াতে নতুন বাজার সৃষ্টির চেষ্টা সফল হচ্ছে। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবির কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছন। সম্প্রতি বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানান, আমেরিকা ও ইউরোপে যখন আমাদের অর্ডার যখন কমছে, তখন থেকে আমরা নতুন বাজার সৃষ্টির চিন্তা করি। সেই চিন্তা থেকেই জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো খুঁজে বের করেছি। সেখানে আমাদের রফতানি বেশ ভালো হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতেও রফতানি পণ্যের বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ চলছে জোরেসোরে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রফতানি ৮ শতাংশ কমে যায়। তারপরও দেশটিতে সর্বোচ্চ ৭৯৪ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়। এরমধ্যে তৈরি পোশাকই ছিল ৬৯৫ কোটি ডলার, যা কিনা বাংলাদেশে মোট তৈরি পোশাক রফতানির ১৮ শতাংশের কাছাকাছি। পাশাপাশি করোনা ও যুদ্ধের কারণে ইউরোপের বাজারে আমাদের রফতানি অনেক কমে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত অর্থবছর ১ হাজার ৪২ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির মধ্যে তৈরি পোশাকই ছিল ৮৬ শতাংশ, যা পরিমাণে ৯০১ কোটি ডলার। এ ছাড়া ৩১ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রফতানি হয়। বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া তৈরি পোশাকের ২১ শতাংশ এবং হোম টেক্সটাইলের ১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
ইপিবি বলছে রফতানির এই নির্ভরতা কমানোর জন্যে এক দশকের বেশি সময় ধরে অপ্রচলিত বা নতুন বাজার সৃষ্টির বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেয়া হচ্ছে নগদ সহায়তাও। এতে মোট পোশাক রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ, যুক্তরাজ্য ও কানাডার বাইরে অন্যান্য দেশ থেকে রফতানি ১৫ শতাংশের ঘরে। গত অর্থবছর নতুন দেশগুলোতে ৬৩৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘অপ্রচলিত বাজার সৃষ্টির ফলে করোনা এবং পরবর্তী সময়ে অনেক দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বরং তাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ তাদের অনুসরণ করেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রচলিত বাজার বলতে বোঝে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে । পাশাপাশি জাপান অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকোর বাজারকে বলা হচ্ছে অপ্রচলিত বাজার।
অপ্রচলিত বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ আরও কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি জানান, ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক খাতে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দশ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার এসেছে। তার মানে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। এজন্য পথনকশা বা রোডম্যাপ তৈরির কাজ এখন চলছে।
বিজিএমইএ নেতার বক্তব্যের সত্যতা মেলে ইপিবির প্রতিবেদনেও। তারা বলছে ২০২৩ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারে ৮.৩৭ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। যা ২০২২ অর্থবছরের ৬.৩৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩১.৩৮% বেশি। তৈরি পোশাক খাতে রফতানি আয়ের মোট ১৭.৮২% এসেছে অপ্রচলিত বাজার থেকে। আবার ২০২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানি খাত থেকে মোট আয় ৪৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার। যা ২০২২ অর্থবছরের ৪২.৬১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০.২৭% বেশি।
এদিকে তৈরি পোশাক রফতানির ‘বিলিয়ন ডলার ক্লাব’ অপ্রচলিত বা নতুন বাজারের তিন দেশ এসেছে। এবছর মধ্য জুলাইয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রথমবারের মতো নতুন বাজার হিসেবে পরিচিত তিন দেশ অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানে পণ্য রফতানি ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নতুন বাজারের শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে জাপানে ১৬০ কোটি ডলার, অস্ট্রেলিয়ায় ১১৬ কোটি ডলার, ভারতে ১০১ কোটি ডলার, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫৪ কোটি ডলার ও রাশিয়ায় ৪৩ কোটি ডলার পোশাক রফতানি হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানান, সম্প্রতি নতুন বাজার হিসাবে, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে করে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথমে আমলে আনা হচ্ছে ওই সব দেশের বাজারে কী ধরনের পোশাকের চাহিদা বেশি। কোন মৌসুমে কী ধরনের পোশাকের কদর রয়েছে। তাদের ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে বাজার সম্প্রসারণে বাংলাদেশি পণ্যের একক মেলা এবং প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের নতুন বাজার সৃষ্টির তালিকায় রয়েছে, লাতিন আমেরিকা। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্যতম বড় পোশাক প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, 'লাতিন আমেরিকা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের জন্য একটি বড় বাজার। এর কারণ বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা তাদের ফ্যাশন ও স্টাইলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য সরবরাহ করতে পারে।‘ আর উর্মি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০১৫ সাল থেকে চিলিতে শূন্য শুল্ক সুবিধা ভোগ করছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, লাতিন আমেরিকায় ২৫টির বেশি দেশের ৬৬ কোটি ভোক্তার বাজারে ৩৫ শতাংশ রফতানি শুল্ক থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা ভালো করছেন। ঢাকায় কয়েকটি দেশের দূতাবাস খোলা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং চিলি বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ায় লাতিন আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রফতানিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশের মোট পণ্য রফতানি ২০ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়ে ৬২১.২৭ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ৫১৫.৫০ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রফতানি আয় এসেছে ১০৭.৭৫ মিলিয়ন ডলার।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available