মোহাম্মদ শফিক, কক্সবাজার: রোহিঙ্গা আগমনের ৭ বছর পূর্ণ হলো আজ। মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সেনারা হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়ায় জীবন বাঁচাতে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে। শরণার্থীদের প্রধান ঢলটি আসে ২৫ আগস্ট। তাই এই দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছে রোহিঙ্গারা। সেই থেকে বিপুল শরণার্থীর ভার বাংলাদেশ ভয়ে গেলেও নানা প্রচেষ্টার পরেও মিয়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা বাহিনীর সংঘাতময় পরিস্থিতিতে এখনও অনিশ্চয়তার পথে প্রত্যাবাসন। সেই হিসেবে উখিয়া-টেকনাফ এর বিভিন্ন ক্যাম্পে উপযুক্ত প্রত্যাবাসনের দাবিতে সমাবেশ করছে রোহিঙ্গা কমিউনিটি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ কমিশনার সামসুদ্দৌজা নয়ন জানান, পরবর্তী সময়ে এসব ক্যাম্প থেকে এ যাবৎ প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গার স্থান হয় নোয়াখালীর ভাসানচরে।বাংলাদেশের ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা প্রতিবারের মতো আজ দিবসটিকে ‘জেনোসাইড ডে’ হিসেবে পালন করছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩১টি ক্যাম্পের মধ্যে চারটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা সমবেত হয়ে জেনোসাইড দিবসটি উদযাপন করছে। তন্মধ্যে উখিয়ার কুতুপালং-৪, বালুখালীর ১১ ও ১৩ এবং টেকনাফের ২৬ নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা সমবেত হয়েছে।
এসব কর্মসূচি আয়োজকদের পক্ষে কুতুপালং ৪ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মৌলভী সৈয়দুল্লাহ জানান, তাদের এবারের দাবির পক্ষে স্লোগান হবে- ‘নো মোর রিফিউজি লাইফ, গো হোম এবং ইউএন সেভ জোন ইন মিয়ানমার।
এদিকে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া ও রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে ২০১৭ সালের পর থেকে কয়েক দফা চেষ্টা করেও আলোর মুখ দেখেনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা বাহিনীর সংঘাত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
২০২২ সালের নভেম্বরে মায়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব নিয়ে অনীহা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়নি দাবি করায় বন্ধ হয়ে যায় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। এরপরেও ক্যাম্পে বসবাসরত সাধারণ রোহিঙ্গারা মর্যাদাপূর্ণ হয়ে ফিরতে চান নিজ দেশে। ফিরে পেতে চান নিজেদের হারানো সবকিছু।
এআরএইচপিএস এর সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের ও উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইসমাইল মাঝি বলেন, বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে এই বোঝা বড় প্রভাব ফেলবে। অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের এখানে পাঠাতে না পারলে ক্যাম্পে থাকা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে। তাই আরাকানে সেইফ জোন করে সেখানকার রোহিঙ্গা ও এখানকার সবাইকে পাঠানোর জন্যে কূটনীতিক ও নতুন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
স্কাসের চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা বলেন, ইতিমধ্যে ফান্ড নিয়ে দেশি বিদেশি এনজিও সংস্থাগুলোতে নানা সংকট দেখা দিয়েছে। দিন দিন এই সংকট প্রকট হচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই এর একমাত্র সমাধান।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার প্রবেশ করেছে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ৩১টি ক্যাম্পে তারা অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available