লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটে মারাত্মকভাবে দেখা দিয়েছে গবাদি পশু গরুর লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বাড়িতে পালিত ও খামারিদের গরু। ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে মৃত্যুহার কম হলেও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে দুগ্ধ ও চামড়া শিল্পে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পশুর চামড়া অনেকটাই অকার্যকর হয়ে যায়। লাম্পি স্কিন রোগের কারণে খামারিদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত কয়েক দিন থেকে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলেছে। দ্রুত এ রোগের কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে এ অঞ্চলে মহামারী আকার ধারণ করবে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
মশা-মাছি বাহিত রোগটি মূলত মশার মাধ্যমেই বেশি ছড়ায়। আক্রান্ত গরু সুস্থ হতে দীর্ঘদিন সময় লাগে। দিন দিন গরু-বাছুর দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মারাও যায়। একটি খামারকে অর্থনৈতিকভাবে ধসিয়ে দিতে খুরা রোগের চেয়েও অনেক বেশি ভয়ঙ্কর রোগ লাম্পি স্কিন এলএসডি।
বর্তমান সময়ে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গরুর এই রোগটি দেখা যাচ্ছে। এ রোগের কারণ-মূলত এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্তের সময়-রোগটি প্রধানত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে বা বসন্তের শুরুতে মশা-মাছির বেশি বিস্তারের সময় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। রোগের লক্ষণ-আক্রান্ত গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবার রুচি কমে যায়। জ্বরের সাথে সাথে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়, দুই পায়ের মাঝে পানি জমে যায়।
পশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়। আর এ ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে। শরীরের কোথাও কোথাও ফুলে যায়। যা ফেটে টুকরা মাংসের মতো বের হয়ে ক্ষত হয় এবং পুঁজ বের হয়। পাকস্থলি বা মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরুর পানি পানে অনীহা তৈরি হয় এবং খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।
আক্রান্ত গরুর লালা গরুর খাবারের মাধ্যমে এবং খামার পরিচর্যাকারী ব্যক্তির কাপড়ের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত গাভির দুধেও এ ভাইরাস বিদ্যমান। তাই আক্রান্ত গাভীর দুধ খেয়ে বাছুর আক্রান্ত হতে পারে।
এদিকে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়লেও এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, খুব সাধারণ চিকিৎসায় গবাদি পশুর এই রোগ সারানো সম্ভব। সচেতনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। লাম্পি স্কিন রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে খামারিরা বলছেন, এই লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে খামারকে মুক্ত রাখা না গেলে এই অগ্রযাত্রায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। গাভী আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসে। ফলে উৎপাদন কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা। লাম্পি স্কিন ডিজিজ গরুর জন্য একটি ভয়ঙ্কর ভাইরাস জনিত চর্মরোগ, যা খামারের ক্ষতির কারণ। দ্রুত রোগটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে জেলার প্রাণিসম্পদ খাত।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলায় লাম্পি স্কিন এলএসডি রোগে গরু আক্রান্ত হয়েছে সীমিত আকারে। আক্রান্ত গরুকে সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। বেশি আক্রান্ত যেনো না হয় সে বিষয়ে খামারিদের বিভিন্ন উপদেশ দেওয়া হচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available