নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, গতকাল তারা নাকি আমাকে নিয়ে খুব অশ্লীল কথা বলেছে। সাংবাদিকরা বলছে, নারায়ণগঞ্জে কিছু ঘটলে বিএনপি ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আপনাকে দায়ী করে কেনো। আওয়ামী লীগকে দায়ী করে না, আরও এমপি, মন্ত্রী, মেয়র আছে তাদের দায়ী করে না। আমি মনে করি, তারা একারণেই দায়ী করে কারণ, ১৬ জুন আমাকে বোমা মেরে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। এরাই ক্ষমতায় আসার পর বায়তুল আমানে গুলি করা হয়েছে।
৫ এপ্রিল শুক্রবার জুমার নামাজের পর নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে শহরে জিয়া হলে শহীদ জিয়ার ম্যুরাল ভাঙ্গা নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, আমরা বলেছি এখানে একটি মঞ্চ হবে। এখানে ১৯৪৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সকল ইতিহাস ধারণ করা হবে। এখানে বিএনপিরও গর্ববোধ করা উচিত। কারণ তাদের পূর্ব পুরুষরাও এখানে অবদান রেখেছে। গতকাল দেখলাম আমাকে দায়ী করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল তো থাকারই কথা না। পঞ্চম সংশোধনিতে সুপ্রিম কোর্ট জিয়াউর রহমানের শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
তারা নাকি ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের জনগণ ও আমি তাদের আল্টিমেটামের শক্তি দেখতে চাই। ওরা খুব নোংরা ও অশ্লীল কথা বলেছে। এ সকল অশ্লীল কথা বলে আমার লোকজনকে ফোন করার আগেই তারা বলল ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বললে সেন্ট্রালে আমাদের দাম বাড়ে। ভাই মানে আমি শামীম ওসমান। আমার বিরুদ্ধে কথা বলে বড় নেতা হতে পারলে হোক। আমার আপত্তি নেই। কারা এসব কথা বলেছে আমি তাও জানি না।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালেই এটা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজউক এটাকে ঝুকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। একারণেই এটা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২ তারিখে আমাদের মিটিং ঘোষণা করা হয়েছে। চার তারিখে মিটিং হবে সেখানে এমনি এটা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এটা তো এমনিই ভাঙা হবে। তিন তারিখ কেনো ভাঙতে যাবো। ওরা হয়ত এটাকে ভেঙেছে অথবা ভেঙে পড়েছে। ওরা এটা নিয়ে ইস্যু তৈরি করতে চায়। ওরা চায় না এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত হোক। আমি তাদের বলতে চাই আপনারা পারবেন না।
এটা আমাদের কর্তব্য স্মৃতি রক্ষা করা। এখানে কেউ বাধা দিলে আমরা তাদের প্রতিহত করবো, মানুষ প্রতিহত করবে। এর আগেও কিছু এক্সট্রিম বামপন্থী এটা নিয়ে কথা বলেছিল। আমি এখানে বসে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছি। তারা আর কোনো কথা বলেনি। এখানে জামায়াত ডান বা বাম নেই। এরা একটা গ্রুপ। ওরা নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করতে চায়।
শামীম ওসমান বলেন, জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙতে চাইলে বহু আগেই ভাঙতাম। দিনের বেলা ভাঙতাম। এর আগেও তো ১৯৮৯ সালে জিয়াউর রহমানকে আটকে দিয়েছি। জীবিত অবস্থায়ই তাকে আটকে দিয়েছি। সুতরাং রাতের বেলা ভাঙার প্রশ্ন আসে না। ওরা এটা করে একটা ইস্যু তৈরি করতে চায় যেন এ কাজটা না হয়।
এ ধরনের অশান্তির রাজনীতি করার চেষ্টা যারা করেন তাদের বলতে চাই অন্য এলাকায় গিয়ে এসকল কাজ করুন। নারায়ণগঞ্জের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের বলেছে যারা জ্বালাও পোড়াও করেছে তাদের চিহ্নিত করতে। আমরা তা করিনি, চেয়েছি যে তারা শুধরাক। এমন কিছু করবেন না যেন নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়ে ওঠে। এ কাজটা হলে নারায়ণগঞ্জে একটা খোলামেলা জায়গা হবে। বাচ্চারা শহীদ মিনারের চিপায় বসে থাকে। সেখানে তারা বসতে পারবে, গিয়ে ইতিহাস জানতে পারবে সেখানে।
আমরা আশা করি, এ কাজটি দ্রুত করা হবে। আমার দুই নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেব ও ওবায়দুল মোক্তাদির সাহেব, তারা বলেছেন দ্রুত এ কাজটা করো। আমি আশা করি, আগামী ১৫ আগষ্ট এ মঞ্চ আমরা ওপেনিং করবো। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের নিয়েই এটা ওপেনিং করবো।
আমি ১৯৬৬ সনের ইত্তেফাক পত্রিকার কাটিং নিয়ে এসেছি। যেন পরবর্তী প্রজন্ম এটা জানে। আমি সংসদের ভাষণে বলেছিলাম নারায়ণগঞ্জের টাউনহল স্বাধীনতার স্তম্ভ। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেছিল আমার বাবা। ২০১৪ সালে এটা পরিত্যক্ত করা হয়েছে। সব জায়গায় এটার নাম টাউন হল। আমি সেই টাউন হল কমিটির একজন সদস্য। ২০১৪ সালেই এটা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেখানে কী করা হবে এটা নিয়ে নানান মানুষ নানান মতামত দিয়েছিল।
সর্ষের ভেতর যেমন ভূত থাকে, প্রশাসনের ভেতরেও তেমন ভূত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অতি আওয়ামী প্রশাসনের কারণে গত দশ বছরেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। নারায়ণগঞ্জেই ইতিহাস বদলে দেয়া হচ্ছিল। এগুলো দেখার পর আমরা সোচ্চার হই, এই বইগুলো কালেক্ট করি। আমি সংসদে ভাষণ দেয়ার পরেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত দেয়ার পরে আমরা যদি আমাদের অতীত প্রজন্মকে মূল্যায়ন না করি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের মূল্যায়ন করবে না। আমি বলেছিলার এখানে ছয় দফা মঞ্চ করা হোক। এটা জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব। জেলা প্রশাসকরা দীর্ঘদিন দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক এটা নিয়ে আপ্রান চেষ্টা করছেন।
গতকাল সাংবাদিকের ফোন পেয়ে আমি জেনেছি জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে বিএনপির কিছু নেতা আমাকে দায়ী করেছে। আমি তাদের জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করি না। এরা এমনই নেতা কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির একটি কর্মসূচিতে গোলাগুলি হয়েছিল। পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা হয়েছিল। সেখানে ছাত্রদলের এক সাবেক নেতা যার বাড়ি দেওভোগ, আমি নামই বলছি জাকির খান। তাকে এরা ওই মামলা থেকে বাঁচতে কাল যারা বক্তব্য দিয়েছে তাদের মধ্যে একজন র্যাব বা পুলিশর কাছে তার ঠিকানা দিয়ে নিজেদের রক্ষা করেছেন। তাদের নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available