নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি: ঢাকার নবাবগঞ্জের বান্দুরা ৫২নং বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি’র নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগে সংবাদ প্রকাশের পর গত ২৭ নভেম্বর সোমবার শোকজ দেওয়া হয়েছিল ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ঝর্ণা রানি মন্ডলকে। এতবড় অনিয়ম করার পর ওই সময় এই প্রধান শিক্ষক ঝর্ণা রানীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
‘নবাবগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির প্রমাণ মিললেও নীরব কর্তৃপক্ষ’ এমন শিরোনামে এশিয়ান টিভি অনলাইনে গেল মাসের ১৫ তারিখে ধারাবাহিক প্রতিবেদন হিসেবে (দ্বিতীয় পর্ব) সংবাদ প্রকাশ করা হয়৷ পরপরই বিষয়টি নজরে আসে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভাগীয় উপ-পরিচালকের। এরপর নবাবগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়৷ শিক্ষা কর্মকর্তা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে (দ্বিতীয় দফায়) আবারও তদন্ত করেন৷ এরপর তদন্ত রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবর জমা দেয়া হয়৷ বিষয়টি এশিয়ান টেলিভিশনের প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কাজী রাশেদ মামুন।
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক ঝর্ণা রানি মন্ডলের এমন দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ এলাকাবাসীসহ শিক্ষার্থীরা৷ তারা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অনিয়ম কখনই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়৷ আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি এই দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেমন তদন্ত হয়েছে, তেমনি তার বিরুদ্ধে যেন বিভাগীয় শাস্তি হয়৷ তারা আরও বলেন, ‘এত দুর্নীতি করার পরও যেন এই শিক্ষক কোনো ধরনের ছাড় না পায় সেদিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানাই। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে দাপ্তরিক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী রাশেদ মামুন এশিয়ান টিভি অনলাইনকে বলেন, ‘৫২নং বান্দুরা বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঝর্ণা রানী মন্ডলের বিরুদ্ধে পরীক্ষার ফি বাবদ ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ছিল৷ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পাঁচজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে (এটিও) নিয়ে দ্বিতীয় দফায় তদন্ত করেছি৷ টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্যতা মিলেছে৷ তদন্ত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর পাঠিয়েছি৷ আশা করি, দ্রুতই পদক্ষেপ নিবে কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, ‘সপ্তম শ্রেণির ১৫০ টাকা এবং অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছিল। ওই সময়ে তদন্ত কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান শামীম ও ফাতেমা আক্তার তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে রিপোর্ট জমা দেয় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবর। কিন্তু অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের জোরতদবিরে এই তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়নি। এমন কাণ্ডে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে নানা আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথম পর্ব সংবাদ যেন প্রকাশ না হয় সেজন্য ওই সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বিদ্যালয়ের সভাপতি শুকুমার হালদারকে ডেকে এনে এশিয়ান টেলিভিশনের প্রতিবেদককে ভয়ভীতি দেখায় এই প্রধান শিক্ষক। সরেজমিনে বিদ্যালয়ে তথ্য সংগ্রহ করে বের হওয়ার পর বিদ্যালয়ের সামনে বাগানে সংবাদকর্মীকে ডেকে কথা বলেন শুকুমার৷ সংবাদ যেন না প্রচার করি সেজন্য বিভিন্ন জনকে তার মুঠোফোন দিয়ে কল করে কথা বলেন৷ একপর্যায়ে এশিয়ান টেলিভিশনের প্রতিবেদক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে৷ শুধু শুকুমার নয়, একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি দিয়ে এই প্রতিবেদককে জোর তদবির চালিয়েছিল সংবাদ প্রকাশ বন্ধ করতে৷
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available