কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লা সদরের দুর্গাপুর ইউনিয়নের আমতলী এলাকায় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাশপিয়া আত্মহত্যার প্ররোচণা মামলার প্রধান তিন আসামি এখনো ধরাছোয়াঁর বাইরে। তবে মামলার ৪ নম্বর আসামি মো. রাহিম (২২) গ্রেফতার হয়েছে।
কাশপিয়ার মৃত্যুর পর আত্মহত্যার মামলা হলেও এই মৃত্যুকে ঘিরে প্রতিনিয়ত রহস্য বাড়ছে। নিহতের পরিবারের অনেকেই বলছে,ন এটা পরিকল্পিত হত্য। বাড়িতে একা পেয়ে কাশপিয়াকে হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে পালিয়ে যায় ঘাতকরা। আর ঘাতকরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় এ রহস্য আরো ঘনীভূত হচ্ছে। আসামিদের প্রায়ই এলাকায় দেখা গেলেও রাজনৈতিক কারণে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিহত বারিহা সিদ্দিকা কাশপিয়া (১২) কুমিল্লা সদরের আমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকার সৈয়দ আলী বাড়ির বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। সে কুমিল্লা সেনানিবাসের পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী। ১৯ জুন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নির্জন বাড়িতে কাশপিয়ার ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের মা ছায়েমা আক্তার শান্তা। মামলার প্রধান চার আসামি হলেন সদরের আমতলী এলাকার মোবারক হোসেনের ছেলে সজিব হোসেন (২৪), শাহ আলমের ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বি (২২), ময়নাল হোসেনের ছেলে রকিব হোসেন (২২) এবং আবুল কাশেমের ছেলে মো. রাহিম (২২)।
থানায় দায়ের করা মামলায় নিহতের মা শান্তা জানান, ‘আমার বড় মেয়ে বারিহা সিদ্দিকা কাশপিয়া গত ৮/৯ মাস ধরে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিবেশী মোবারক হোসেনের ছেলে সজীব হোসেনের সাথে প্রেমের সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও কলে কথা বলার সময় সজীব আমার মেয়ের আপত্তিকর কিছু ছবি স্ক্রিনশট নিয়ে রেখে তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। আমি এ বিষয়ে জানতে পেরে ছেলের মায়ের কাছে বিচার দেই এবং ছেলেকে আমার মেয়ের সাথে কথা বলতে বারণ করি। পরে সজীব আমার ভাসুরের ছেলে রাসেলের কাছে এসব আপত্তিকর ছবি পাঠায়। রাসেল এসব দেখে সজীবকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে। পরে সামাজিকভাবে বসে সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু তারা সামাজিক সিদ্ধান্ত না মেনে গত ১৯ জুন বিকেল ৪টায় সজীব, রাব্বি, রকিব ও রাহিমের নেতৃত্বে আরও ১০/১৫ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে আমার মেয়ে ও ভাসুরের ছেলেকে খোঁজ করতে। তারা বাড়িতে এসে আমার মেয়ের নামে অশ্লীল কথাবার্তা বলে যায়। আশেপাশের সবার সামনে আমার মেয়েকে অপমান করে। পরে বিকেল সাড়ে ৪টায় আমার মেয়ের কক্ষে তার ঝুলন্ত মরদেহ পাই।’
এর আগে গত ২ জুন কাশপিয়ার মা শান্তা নিরাপত্তা চেয়ে এই আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি দায়ের করেছিলেন।
পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় ও নিহতের সাথে কথা বলে এবং সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানা যায়, সজীব, রাব্বিরা যখন বাড়িতে হামলা করতে আসে তখন কাশপিয়া তার কক্ষে একা ছিল। তারা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর কাশপিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। তবে মরদেহের কিছু চিত্র রহস্যের জন্ম দিয়েছে। যেমন, আত্মহত্যা করলে হাত মুষ্টিবদ্ধ থাকবে। মলদ্বারে মল থাকবে। কিন্তু কাশপিয়ার হাত মুষ্টিবদ্ধ ছিল না। মলদ্বারে মল ছিল না। নিহতের পরিবারের দাবি তার কক্ষে একা পেয়ে কাশপিয়াকে হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখে যায়।
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন জানান, আমরা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছি। আশা করি, দ্রুতই অন্য আসামিরা গ্রেফতার হবে। আর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই বলতে পারবো, এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available