নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের কিশোর ইয়াশ শরীফ খান (১৭) খেলতে যাওয়ার কথা বলে যোগ দিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলনে। সেই আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ একসঙ্গীকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেও গুলিবিদ্ধ হন। সদা হাস্যোজ্জ্বল ইয়াশ এখন আর কাউকে চিনতে পারছেন না। জীবনজুড়ে তার শুধুই আঁধার।
চট্টগ্রাম বন্দর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সদ্য এসএসসি পাস ইয়াশ ভর্তি হয়েছিলেন নগরের ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজে। কলেজে পা দেওয়া ইয়াশের মায়ের মৃত্যু হয় এর কিছুদিন আগে। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় খেলতে যাওয়ার কথা বলে ১৮ জুলাই যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে।
চট্রগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটে শিক্ষার্থীরদের অবরোধ চলাকালে সেখানে সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। হামলার শুরুতেই গুলিবিদ্ধ হন ইয়াশের একসঙ্গী। তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে গুলিবিদ্ধ হন ইয়াশও। গুলিবিদ্ধ সঙ্গীকে কাঁধে তুলে ফেরার পথে ঘাতকের বুলেটে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায় ইয়াশের বাম পায়ের উরু।
৩১ জুলাই অবস্থার অবনতি হওয়ায় ইয়াশকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। ২ জুলাই পায়ের অপারেশন হয় ইয়াশের। কিন্তু পরদিন থেকেই স্মৃতি লুপ্ত হতে থাকে এ স্বপ্নবাজ কিশোরের। বর্তমানে সে কাউকে চিনতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন স্বজন ও চিকিৎসকরা। অবস্থার আরও অবনতি হলে ২৮ আগস্ট ইয়াশকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ইয়াশের চাচাতো বোন জোনেবা খানম সাইকা বলেন, ফুটবল খেলতে ভালোবাসে আমার ভাই। সেদিনও টার্ফে খেলতে যাওয়ার কথা বলেই আন্দোলনে গিয়েছিল। মা হারিয়েছে ঘটনার কদিন আগেই। বিবেকের দায় এড়াতে পারেনি ইয়াশ।
১৮ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত ইয়াশের জ্ঞান ছিল, আমাদের সঙ্গে কথাও বলেছে। ৩ আগস্ট থেকে আর কাউকে চিনতে পারছে না। শুধু আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেশবাসীর কাছে আহ্বান আমার ভাইয়ের জন্য কিছু করুন। বলেন সাইকা।
ইয়াশের বাবা এজাজ খান নগরের হালিশহরে একটি ডিস ক্যাবল অপারেটর প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। গত ১০ জুন ইয়াশের মায়ের মৃত্যু এবং একমাসের ব্যবধানে ইয়াশ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় পুরো পরিবারকে এলোমেলো করে দিয়েছে। বর্তমানে ধারদেনা আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তার ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে ইয়াশের বাবাকে।
এজাজ খান বলেন, আজ শুক্রবার সকালেও চিকিৎসক এসেছেন। তারা বলছেন, গুলির আঘাতে ইয়াশের নার্ভ সিস্টেমে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে তারা আশা করছেন সঠিক চিকিৎসা করা সম্ভব হলে ছেলেটা বাঁচবে।
আমি স্বল্প আয়ের মানুষ। প্রাথমিকভাবে নিজের সবকিছু দিয়ে আর ধারদেনা করে চিকিৎসা চালিয়েছি। গণঅভ্যুত্থানের পর অনেকে সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন চট্টগ্রামে। কিন্তু এ ঢাকায় আমাদের কেউ নেই। আপাতত আমরা তিনজন হাসপাতালেই দিনরাত কাটাচ্ছি। সহায়তার যে অর্থ পেয়েছিলাম তাও শেষ। দেশবাসীর কাছে আমার ছেলের জন্য দোয়া ও চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়ার সহায়তা চাইছি।’- বলেন এজাজ খান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ মইন উদ্দিন হাসান বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ইয়াশের বাবার থাকার বন্দোবস্ত করছি। চিকিৎসা চালানোর জন্য অর্থের প্রয়োজন, এখন সেই চেষ্টা করছি। এ জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আশার আহ্বান জানাচ্ছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য মো. রিয়াজ উদ্দিন সাকিব বলেন, ‘চিকিৎসার অভাবে আমাদের কোনো ভাই মারা যাবে এটা হতে দেবো না। এরই মধ্যে ইয়াশের বিষয়ে বেশ কয়েকজন ডোনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর বাইরেও আন্দোলনে আহত কেউ যদি চিকিৎসায় সমস্যা পোহান, তাদের বিনা সংকোচে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available