গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিশু এখন দশ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। শৈশবের গন্ডি না পেরোতেই এই শিশু নিজের গর্ভে বড় করছে আরেক শিশুকে। সন্তান প্রসবের সময় এগিয়ে আসায় শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে তার।
বিদ্যালয়ের সহপাঠিদের সাথে শৈশব রাঙানোর কথা ছিল তার। অথচ, শিশুটি এখন কেবলই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ক’দিন বাদেই চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা। কিন্তু ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া শিশুটি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে আরেক শিশুর জন্ম দেবে। ১১ বছর বয়সে মা হতে যাচ্ছে শিশুটি। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জন্ম নিতে যাওয়া শিশুর পিতৃ পরিচয় নিয়ে।
ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার জানায়, ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির দাদি বাদী হয়ে ১৮ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন ধর্ষক জাহিদুল খাঁর (৫৫) বিরুদ্ধে। ধর্ষককে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জাহিদুল খাঁ গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দক্ষিণ নাড়িবাড়ি গ্রামের কালু খাঁর ছেলে। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
২৩ আগস্ট বুধবার বিকেলে বাড়িতে বসে শিশুটি জানায়, ঘটনার দিন শুক্রবার ছিল। দুপুরে গোসলের পর বাড়ির ভেতর কাপড় পরিবর্তন করছিল সে। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ধর্ষক জাহিদুল পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরে মুখে গামছা পেঁচিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে গলা কেটে হত্যার হুমকিও দেন তাকে। ওই ঘটনায় সে দুইদিন যাবত অসুস্থ ছিল। ভয়ে বাড়ির বাইরে যায়নি অনেক দিন।
শিশুটির চাচি জানান, ঘটনার সাত মাস পর তার শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেয়নি সে। তবে পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে গর্ভে সন্তান থাকার কথা জানতে পারেন তারা। এরপর স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার পর চিকিৎসক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এখন প্রসবের সময় এগিয়ে আসায় শিশুটি ভীত হয়ে পড়েছে।
শিশুর চাচা জানান, শিশুটির পিতামাতা দুজনেই পৃথকভাবে বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। ছোট থেকে শিশুটিকে তারাই লালন পালন করছেন। স্থানীয় একটি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে সে। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং পরীক্ষা দেওয়া কোনটিই হচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর গ্রাম্য সালিশে রফা করতে চেয়েছিলেন ধর্ষক জাহিদ। কিন্তু তা হয়নি। মামলা দায়ের হলেও আসামি গ্রেফতার হয়নি। এখন প্রতিবেশীদের কটুকথা শুনতে হচ্ছে তাদের।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বলেন, শিশুর পেটে শিশু জন্ম নেওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক। ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ২২ আগস্ট মঙ্গলবার আবারও শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন তিনি।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, আসামি পলাতক থাকায় তাকে এখানো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযান অব্যাহত আছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় জানান, এমন দুঃখজনক ঘটনা গুরুদাসপুরে এটিই প্রথম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্তঃসত্ত্বা শিশুটির দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়সে মা হতে গিয়ে জরায়ু ছিড়ে যাওয়াসহ জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সরকারিভাবে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চাটি ভূমিষ্ঠ করানো হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available