মিতা দাশ: শ্রাবণের কালো মেঘের অন্ধকারে যেন হঠাৎ আলোর ঝলক। আলো ছড়ালেন সর্বত্র আমাদের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। অসাধারণ এক জ্যোতির্ময়ী নারী তিনি। নিরবেও যে আলো ছড়ানো যায় এটা দেখিয়ে গেলেন আমাদের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব (ওরফে রেণু)। ৩ বছরে বাবা ও ৫ বছরে মাকে হারিয়ে আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মায়ের কাছে মানুষ হন তিনি। বাড়িতেই পড়াশোনা করেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। পরবর্তীতেও এই পড়াশোনার অভ্যাস থেকে যায় উনার।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন:
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
কোন কালে কভু হয়নিকো একা জয়ী, পুরুষের তরবারি,
শক্তি দিয়েছে, প্রেরণা দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী।
অর্থাৎ প্রত্যেক পুরুষের সফলতার পেছনে একজন নারীর অবদান থাকে। আমাদের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন তেমনি এক সংগ্রামী, মহীয়সী নারী, যিনি নিজেকে নেপথ্যে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অভীষ্টের দিকে এগিয়ে যেতে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছেন। সংসারের সমস্ত ভাবনা থেকে নির্ভার রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে, তিনি একা হাতে কান্ডারী হয়ে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন, পাশাপাশি পরিবারের প্রায় সকল দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাই, বঙ্গমাতা একটা ভালোবাসার নাম। তিনি শেখ মুজিবের পাশে পাশে ছায়ার মতো ছিলেন। দেশের সেবা ও সকল মানুষের প্রিয় ছিলেন তিনি।শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন বারবার রাজনৈতিক কারণে জেলে থাকতে হয়েছে, তখন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব একাই অবিচলভাবে সামলিয়েছেন সব।
বঙ্গবন্ধুকে হিমালয় সম আসনে অধিষ্ঠিত করতে সাহস যোগিয়েছেন, প্রেরণা যোগিয়েছেন, সঙ্গ দিয়েছেন তিনি। খোকা থেকে শেখ মুজিব, মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের।
১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের পক্ষে জনসমর্থন আদায় ও জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে লিফট লেট হাতে রাস্তায় নেমেছিলেন বঙ্গমাতা।সেই সময় নিজের অলংকার বিক্রি করে টাকার যোগান দিয়েছিলেন।
স্বাধীনতার পর বীরাঙ্গনাদের বলেছিলেন আমিই তোমাদের মা।শেষ পর্যন্ত ও তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণাদায়ক হিসেবে সকলের পাশে।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা নামটি বললেই বলতে হয় শেখ মুজিবের নাম, আবার শেখ মুজিবের কথা বললেই বলতে হয় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কথা। তারা একে অপরের ছায়াসঙ্গী।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন আমাদের আলোকবর্তিকা, তাই বাঙালি জাতি ভালোবেসে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে বঙ্গমাতা উপাধিতে ভূষিত করেন।
আজীবন তিনি আমাদের অনুস্মরণীয় ও আদর্শ হয়ে থাকবেন। বঙ্গমাতার জন্মদিনে রইলো আমাদের অফুরন্ত ভালোবাসা, গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান।
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, বিএএফ শাহীন কলেজ, চট্টগ্রাম।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available