সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: বর্তমানে বলা হয় নারী-পুরুষের সমঅধিকার। কিন্তু বাস্তবে এটি হয়নি। এখনো বিভিন্ন সেক্টরে সমান শ্রম দিয়েও নারী থাকছে মজুরী বৈষম্যের বেড়াজালে। সম-পরিমাণ শ্রম দিয়েও নারীরা মজুরি পাচ্ছেন পুরুষের চেয়ে অর্ধেক।
নীলফামারী জেলায় বিভিন্ন কলকারখানা, ইটের ভাটা ও হোটেল রেস্তোরায় প্রায় এক লাখ নারী কাজ করছেন। একজন পুরুষ যে কাজ করে থাকে, ঠিক একজন নারীও সেই কাজ করে। তবে পুরুষ যেখানে মজুরী পান ৩শ’ টাকা আর নারীরা সেখানে পান ২শ’ টাকা। এ বৈষম্য দীর্ঘদিন থেকে চলে আসলেও দাবি পুরণ হয়নি তাদের আজও।
প্রতি বছর নারী দিবসে বৈষম্য দূরীকরণের আশ্বাস দেয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু দিবস পার হয়ে গেলে সে কথা আর মনে থাকে না কারো। নারীর মর্যাদা রক্ষায় সরকারি-বেসরকারিভাবে ঘটা করে বিভিন্ন দিবস, সভা-সেমিনার করা হলেও মাঠ পর্যায়ে নেই তার কোনো প্রতিফলন।
সদর উপজেলার রামগঞ্জ বাজারের সামছুল তামাক ক্রাশিং মিলে কাজ করতে আসা (ছদ্মনাম) রুপা, মেরিনা, ফেলানী, তহমিনা, বিলকিস বলেন, আমাদের দেখার কেউ নেই। এখানে সকাল ৮টায় কাজে যোগ দিয়েছি। বাড়ির পথে রওনা হবো বিকেল চারটার পর। প্রতিদিন এভাবেই চলে। আমাদের বেতন দেয় ২২০ টাকা আর তাদের (পুরুষের) বেতন ৫০০।
নাম না প্রকাশের শর্তে অভিজাত গ্রুপ অব কোম্পানির অনেক নারী শ্রমিক বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে মজুরি পাই মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এ দিয়ে সন্তানের লেখাপড়া আর সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। আমরা যদি পুরুষের সমান মজুরি পাই তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। কিন্তু মালিককে বললে তারা বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো চাকুরি হারানোর হুমকি দেন।
জেলা সদরের টেংগনমারী এলাকার মেরিনা বেগম বলেন, মাঠে সব ধরনের কাজ করি, পুরুষেরা মজুরি বেশি পায়। আমরা পুরুষের তুলনায় বেশি সময় ধরে কাজ করি। কাজের মধ্যে পুরুষেরা বিশ্রামের বিরতি নিলেও আমরা তেমন বিশ্রাম নিই না। কিন্তু পুরুষ শ্রমিকরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পেলেও আমরা পাই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
নুরবানু আক্তার নামে এক ভাটা শ্রমিক বলেন, কাজের সময় পুরুষরা তাও এদিক ওদিক যায়। আমরা মেয়েরা দুপুরের বিরতি ছাড়া পুরো সময়টাতেই কাজ করি। তারপরও ওদের মজুরি আমাদের চেয়ে বেশি।
ডোমার শালকী ব্রিকসের শ্রমিক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ভাটায় ফজরে আসি আর বিকেল ৫টায় চলে যাই। সারাদিন কাজ করে মজুরি পাই ৫০০ টাকা। আর একই কাজে নারী শ্রমিকরা পায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এ টাকা দিয়ে সংসার চলে না, তারপরও খুব কষ্টে চলতে হচ্ছে। মালিক যদি বেতন না বাড়ায় আমাদের কিছু করার নেই। বেশি কিছু বললে মালিক পক্ষের কড়া হুশিয়ারি কাজ করতে হবে না, চলে যান।
নীলফামারীর নারী নেত্রী সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আরিফা সুলতানা লাভলী বলেন, পুরুষশাসিত সমাজে তাল মিলিয়ে সমান কাজ করলেও নারীরা মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অথচ প্রতিবছর শ্রমিক দিবস, নারী দিবস পালিত হয়। সকল কাজে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের কথা বলা হয়। কিন্তু ন্যায্য মজুরির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের দেশের নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। তারা কর্মক্ষেত্রে সফলতা দেখাচ্ছেন। যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই বৈষম্য দূর করার জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে বৈষম্য ধীরে ধীরে কমে আসবে।
এ বিষয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, সরকারি কাজ টিআর, কাবিখা, কর্মসৃজনসহ বিভিন্ন প্রকল্পে নারী পুরুষের সমান মজুরি দেওয়া হয়। বেসরকারি ও মালিকানাধীন কাজেও নারী পুরুষের মজুরি বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available