সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: নীলফামারীর কাছারীপাড়া এখন সরিষা গ্রাম নামে পরিচিত। এ গ্রামটির চারপাশে শুধু সরিষার আবাদ। হলুদে হলুদে শোভা পাচ্ছে বিস্তৃর্ণ মাঠ। গ্রামের চাষিরা বলছেন সরিষা চাষে খরচ কম হয়, পরিশ্রমও তেমন হয় না। তাছাড়া বাজারে সরিষার দামও বেশ ভাল। ফলে গ্রামের কৃষকরা ঝুঁকছে সরিষা চাষে।
নীলফামারী জেলা সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের কাছারীপাড়া গ্রামে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন শুধু হলুদ আর সবুজের সমাহার। আমন ধান কেটে সেই জমিতে অল্প খরচে সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এরপর একই জমিতে বিনা সারে বোরো ধানের ভালো ফলন হয় বলে জানান তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৬ উপজেলায় ৮ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবার অর্জিত হয়েছে ৮ হাজার ৬৭২ হেক্টর। অতিরিক্ত আবাদ হয়েছে ৩৬ হেক্টর জমি। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৭৭৭ হেক্টর। এবার গত বছরের চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমি। এ ছাড়াও গত বছর কাছাড়ী পাড়া সরিষা গ্রামে সরিষার চাষ হয়েছিল ৩০০ বিঘা জমি। এবার হয়েছে ৪২২ বিঘা।
কাছাড়ীপাড়া গ্রামের কৃষক মোক্তার হোসেন বলেন, ধান চাষ করে বারবার লোকসান গুনতে হতো। তাই ধানের পাশাপাশি তারা সরিষার চাষে আগ্রহী হয়েছে। এবারে সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করতে তার খরচ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় সরিষা হয় ৪ থেকে ৫ মণ। প্রতি মণ সরিষা বাজারে বিক্রি হয় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায়। এতে বিঘায় লাভ হয় ১৭ হাজার টাকা।
একই গ্রামের সরিষা চাষি আতোয়ার হোসেন বলেন, এবার কৃষি বিভাগ থেকে কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে বীজ পেয়ে দেড় বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। যা ২ থেকে আড়াই মাসের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। এ ছাড়াও কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা আয় করা যায়। সেচের কোনও খরচ নেই। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম জাতের সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। এবার দুই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে।
ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রশিদুল ইসলাম বলেন, এই এলাকায় সম্মিলিতভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে উঠান বৈঠক ও গ্রুপ মিটিংয়ের মাধ্যমে সরিষার চাষ করা হয়। এই ব্লকে টরি-৭, বিনা-৯, বারি-৯, বারি-১৪ ও বারি ১৮ জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক আহমেদ জানান, সদরে ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের কাছাড়ীপাড়া গ্রামে কৃষি বিভাগের প্রণোদনার আওতায় এক কেজি করে ১৫৬ জন কৃষকের মাঝে বিনা মূল্যে সরিষার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, আর জমির পরিমাণ ৪২২ বিঘা অর্থাৎ ৫৭ হেক্টর। উৎপাদিত সরিষার ২১ হাজার লিটার তেল উপজেলার ৫ লাখ জনসংখ্যার শতকরা ২২ ভাগ ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করবে ইনশাআল্লাহ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, গত দুই মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার বেশি চাষ হয়েছে। সরিষা চাষের ব্যাপারে কৃষি বিভাগ কৃষকদের উঠান বৈঠক, গ্রুপ মিটিং ও নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে কাছাড়ীপাড়া গ্রামে ১৫৬ জন কৃষককে প্রণাদনার আওতায় এনে ৪২২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষে জেলায় সাড়া ফেলছে।
তিনি আরও জানান, ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে কৃষকরা এখন ঝুঁকে পড়ছেন সরিষা চাষে। কাছাড়ীপাড়া গ্রাম এখন ‘সরিষাগ্রাম’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রামটি এক নজর দেখতে অনেকে আসছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available