মিরপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: এশিয়ান টেলিভিশনের কুষ্টিয়ার স্টাফ রিপোর্টার হাসিবুর রহমান রিজুর ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। হামলার পর দুই দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত মূল আসামিদের গ্রেফতার করতে পারিনি।
২০ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আহত সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রিজুর স্ত্রী টপি বিশ্বাস কুষ্টিয়া মডেল থানায় বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামায় ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন।
হাসিবুর রহমান রিজু (৪৫) হাটশ হরিপুর গ্রামের আমজাদ মালিথার ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক সত্য খবর পত্রিকার সম্পাদক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রিজু দুই পা, দুই হাত ও মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। মাথায় চারটি সেলাই পড়েছে। দুই পা থেঁতলানো হয়েছে। বাঁ হাতের রক্তনালি কেটে গেছে, এটা গুরুতর। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়েছে।
পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও হাসিবুরের পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসিবুর বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ৮ থেকে ১০ যুবক তাকে ঘিরে ধরেন। তাদের হাতে থাকা হকিস্টিক ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। মাটিতে ফেলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট দুই পা, দুই হাত ও মাথায় আঘাত করেন। শরীরের বিভিন্ন জায়গায়ও হকিস্টিক দিয়ে পেটানো হয়। এ সময় আরও ১৫ থেকে ২০ জন যুবক-কিশোর মারধরকারীদের ঘিরে রাখেন। বাজারে থাকা লোকজন এগিয়ে আসার সাহস পায়নি।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের শালদহ এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী শিপন কটূক্তি করলে এই নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ এবং পূর্ব বিরোধের জেরে হাসিবুর রহমান রিজুর ওপর এ হামলা চালানো হয়। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে হাসিবুর রহমান রিজু সভাপতি সম্ভাব্য প্রার্থী হন। গত ১৯ জুন বুধবার বিকেলে ওই নির্বাচনের মিটিংয়ে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে হরিপুর বাজারস্থ বিদ্যালয়ে মোটরসাইকেল যোগে যাচ্ছিলেন। এসময় পথে স্থানীয় প্রভাবশালী শিপন, মুরাদ ও রাজনের নেতৃত্বে কয়েকজন রিজুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে হামলাকারীরা। রক্তাক্ত অবস্থায় ঘটনাস্থলে প্রায় আধঘণ্টা ধরে পড়েছিলেন রিজু। এসময় ঘটনাস্থলে কাউকে আসতে দেয়নি হামলাকারীরা। পরে হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। এখন তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত বাবার আলী নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ মামলার বাদী হাসিবুর রহমান রিজুর স্ত্রী টপি বিশ্বাস বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে স্থানীয় প্রভাবশালী শিপন কটূক্তি করলে এই নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করার জেরেই আমার স্বামী সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রিজুর ওপর এমন বর্বোরচিত সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। হামলাকারীরা রিজুকে হত্যার হত্যার উদ্দেশ্যে দুই পা ভেঙে দিয়েছে। বাম হাতের কবজি ও দুই হাতের আঙুলে, বুকে ও মাথায় গুরুতর জখম করেছে। এ হামলার সঙ্গে জড়িত কেউ যেন ছাড় না পায়, সেই দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সোহেল রানা বলেন, সাংবাদিক হাসিবুরের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ হামলায় জড়িত থাকায় হরিপুর ইউনিয়নের বোয়ালদাহ গ্রামের মৃত আকবর আলী ছেলে মো. বাবর আলী (৫০) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯ জুন বুধবার গুরুতর জখম হওয়ার পর স্থানীয়রা হাসিবুর রহমান রিজুকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার পর প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার শেষে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
বর্বোচিত হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে রাতেই কুষ্টিয়া সর্বস্তরের সাংবাদিক নেতা-কর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। কুষ্টিয়া মডেল থানায় গিয়েও বিক্ষোভ করেন। সাংবাদিক নেতারা দোষীদের ধরতে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তার আশ্বাসে সাংবাদিকেরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available