সিলেট প্রতিনিধি: হঠাৎ করে সিলেটের ঘরে ঘরে ডায়রিয়া ও জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই কেউ না কেউ ডায়রিয়া, জ্বর বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত। গরমের পর ঠান্ডা আবহাওয়ার এ পরিবর্তনে সিলেট জুড়ে ডায়রিয়া ও জ্বর-সর্দি-কাশিসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
একই সময়ে সিলেটে ডেঙ্গুরোগী বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কিত এসব রোগে আক্রান্তরা। মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সিলেটে আরও ২১ ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে।
সরেজমিনে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শতাধিক রোগী নির্ধারিত বেড ছাড়াও মেঝে ও করিডোরে শুয়ে বসে রয়েছেন। এদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান আবহাওয়ার গতি প্রকৃতি ঠিক নেই। বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টি নেই। আবার বৃষ্টি যখন শুরু হয় তখন টানা বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়ার আকস্মিক এ পরিবর্তনে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি দেখা দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে দিনের বেলায় প্রচুর গরম, আবার তার ভেতরে হঠাৎ বৃষ্টি চলে এলো। কেউ কেউ একটু বৃষ্টিতেও ভিজল, ফলে হঠাৎ প্রচুর গরম থেকে শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলে জ্বর চলে আসে। সাথে অন্যান্য উপসর্গও দেখা দিচ্ছে। ডায়রিয়া, জ্বর-সর্দি-কাশির সবগুলো ডেঙ্গুজ্বরের উপসর্গ হওয়ায় আক্রান্তদের মাঝে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে সিলেটে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বাড়লেও আক্রান্ত সবারই শারীরিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি ঘটছে। ইতোমধ্যে চলতি মৌসুমে সিলেট বিভাগের ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬০৩ জন রোগীর মধ্যে ৪৬০ জন রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে বিভাগজুড়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪১ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি রয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার বলেন, হঠাৎ করে সিলেটে ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এসব রোগী বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, মৌসুমি জ্বর নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। সাধারণ ওষুধ সেবন করলেই জ্বর-সর্দি-কাশি কমে যাবে। যাদের ৪ থেকে ৫ দিনেও জ্বর কমছে না তাদেরকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, গত কয়েকদিন থেকে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। বর্তমানে ২ হাজার ২০০ জনের অধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সাধারণত হাসপাতালে সবসময় ২ হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। হাসপাতালে ডায়রিয়া ও সর্দি-জ্বর-কাশির কি পরিমাণ রোগী আছে তার আলাদা হিসেব নেই। এছাড়া জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে রোগীরা কমই ভর্তি হন। তারা বহির্বিভাগে যোগাযোগ করে বাসায় বসেই চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। জ্বর বেশী হলে আমরা সব রোগীকেই ডেঙ্গু টেস্ট করার পরামর্শ দেই। ডেঙ্গু পজিটিভ হলে এবং রোগীর অবস্থা খারাপ হলেই কেবল ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগে রোগীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে সাধারণত ৩০০০-৩৫০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। এদের মধ্যে কমপক্ষে ১০০০ রোগী থাকেন মেডিসিন বিভাগের। তবে বর্তমানে মেডিসিন বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়েছে। হঠাৎ ডায়রিয়া ও জ্বর-সর্দি-কাশি বেড়ে যাওয়ার এই বিভাগে রোগীর চাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available