বাগেরহাট প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় সুন্দরবন। এ বনের মধ্যে থাকা ৮০টি পুকুর তলিয়ে মিষ্টি পানির আধার সব নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে গত ৮ দিন সুন্দরবনের দুর্গম এলাকার ৪০০ জন বনকর্মী সুপেয় ও মিষ্টি পানির মারাত্মক সংকটে পড়েছেন। সংকটে আছে বন্যপ্রাণিরাও। বন বিভাগের অফিসের আশপাশে হরিণকে পাতলা পায়খানা করতে দেখা গেছে। গত ৮ দিনে সুন্দরবন থেকে উদ্ধার হয় ১২৭ টি হরিণ। যা জলাবদ্ধতায় ডুবে এবং লবণাক্ত পানি খেয়ে মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুন্দরবনের ৪৯ টি অফিসের আওতায় ৮৮০ জন বনকর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে ৪০০ জন দুর্গম এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন। তারা গত ৮ দিন ধরে গোসল করার মতো পানিও পাচ্ছেন না বা খাবার পানিও নেই।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল কবির বলেন, তার জোনের কটকা, কচি খলী, দুবল, শ্যালা, আলোর কোল, শরণখোলা, করমজল, চাঁদপাইসহ অভয়ারণ্যের ৩৭টি বন অফিসের আওতায় ৩৮০ জন বনকর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে ৩০০ জনই মিষ্টি পানির মারাত্মক সংকটে রয়েছেন। খাবার পানি পাচ্ছেন না বা গোসল করার মতো মিষ্টি পানিও পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বেশ কিছু বন্ধ অফিসের আশপাশে হরিণকে পাতলা পায়খানা করতে দেখা গেছে। লবণাক্ত পানি খাওয়ার ফলে এমনটি ঘটছে। অনেক হরিণ লবণাক্ত পানি খেয়ে মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের ও মো. মহসিন হোসেন বলেন, পশ্চিম সুন্দরবনে ৫০০ জন বনকর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে দুর্গম এলাকা মান্দারবাড়িয়া, হলদি বুনিয়া, পুষ্পকাঠি, নটাবেকি, কচিকঠা, হুমকি, ওমর খালি, পাঠকোস্টাসহ অভয়ারণ্যের ১২ টি অফিসে ১০০ জন বনকর্মী মিঠাপানির সংকটে আছেন। তারা গোসল করার মতো পানি পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে সুন্দরবনের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘সুন্দরবনের অভ্যন্তরের পুকুরের লবণাক্ততা দূর করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা পুকুরগুলো লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। এর ফলে ওই পানি এখন বন্যপ্রাণী, বনজীবী এবং বনে অবস্থানরত বনকর্মীদের ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পুকুরের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ক্যাম্প এবং স্টেশনে কর্মরত বনকর্মীরা গত কয়েকদিন গোসল পর্যন্ত করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, পুকুরের লবণাক্তটা দূর করার কোনও সহজ উপায় নেই। বিভিন্ন ক্যাম্প ও স্টেশনের লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত পুকুরগুলোর পানি মেশিন লাগিয়ে সেচ দিয়ে বাইরে ফেলে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পুকুরের সব লবণাক্ত পানি সেচ দিয়ে বাইরে ফেলে দেওয়ার পর অপেক্ষা করতে হবে বৃষ্টির জন্য। বৃষ্টির পানিতে পুকুর ভরার পরে সেটি ব্যবহার করা সম্ভব হবে। কাজেই এখন আমাদের প্রকৃতির ওপরে ভিত্তি করে বৃষ্টির দিকে চেয়ে থাকতে হচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available