মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী আশরাফুজ্জামান ফরিদের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে।
২০ আগস্ট শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মুখে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলে বারি, সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনা আক্তার ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী আশরাফুজ্জান ফরিদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জনতার রুদ্ররোশে ওই তিন কর্মকর্তা/কর্মচারী নিজ দোষ স্বীকার করে মুচলেকা দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মকছেদুল মোমিন তাদের মুচলেকা গ্রহণ করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার আদেশ দেন।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আশরাফুজ্জামান ফরিদ দুর্নীতির দায়ে ছয় বছর আগে শিবালয় থেকে দোহারে বদলি হয়। তদবির চালিয়ে সে মানিকঞ্জের সাটুরিয়া আসে। সেখান থেকে পুনঃরায় শিবালয়ে এসে টানা প্রায় তিন বছর যাবৎ বিস্তর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ২০ আগস্ট মুচলেকা দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন।
কিন্তু ভিন্ন উদ্দেশ্যে দু’দিন পর মুচলেকা প্রত্যাহারের জন্য সিভিল সার্জনের নিকট আবেদন করে। সত্যতা যাচইয়ের জন্য সিভিল সার্জন তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটিতে রয়েছেন হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. মেহেরুবা পান্না, সিভিল সার্জন অফিসের ডা. আলআমীন ও শিবালয়ে কর্মরত আরএমও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ফরিদের নামে হাসপাতাল চত্বরে কোনো কোয়ার্টার বরাদ্দ নেই। তাসত্ত্বেও সে দীর্ঘদিন যাবৎ ২য় শ্রেণির স্টাফ কোয়ার্টারে এ/সি লাগিয়ে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছে। হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে বদলির ভয় দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায় করে আসছেন। চাকুরি দেয়ার কথা বলে অনেকের নিকট থেকে মোটা টাকা নিলেও তা ফেরত না দেয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনেক অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈষম্যবিরোধী এক শিক্ষার্থী জানান, ২০ আগস্ট মুচলেকা দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগকারী ডা. ফজলে বারীর অন্যতম সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত প্রধান সহকারী ফরিদ দোষ স্বীকার করে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে মুচলেকায় স্বাক্ষর করে সিভিল সার্জনের হাতে জমা দিয়েছে। অথচ অসৎ উদ্দেশ্যে মুচলেকার বয়ান অমান্য করে ভিন্ন তদবির চালিয়ে এ কর্মস্থলে থাকার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এর সাথে স্থানীয় এক শ্রেণির সুবিধাভোগীরা তাকে সহায়তা করছে। অপর দিকে, ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে আরও নতুন অভিযোগ তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিকট তুলে ধরা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট গুরুতর আহত শিবালয় থানার এক পুলিশ সদস্য এ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে ট্রেচারে শায়িত অবস্থায় তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে অভিযুক্ত ফরিদ সজোরে চপেটাঘাত করে। এ ঘটনায় উপস্থিত লোকজনের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে আশরাফুজ্জামান ফরিদ উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। তাকে বিপদে ফেলার জন্য এমনটি করা হচ্ছে। ফরিদের স্ত্রী চামেলি রহমান তদন্ত কমিটির নিকট সাক্ষ্য দিতে কেন এসেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ফরিদ জানায়, তার স্ত্রী পার্শ্ববর্তী দৌলতপুর উপজেলায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী পদে কর্মরত আছেন। তাকে শিবালয় কার্যালয়ে প্রেষণে আনা হয়েছে। কিন্তু, তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
তদন্ত কমিটির সভাপতি ডা. মেহেরুবা পান্না জানান, তদন্ত অনুষ্ঠানে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ১০ জন ও ৮ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী সাক্ষ্য প্রদান করেন। সিভিল সার্জন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন যথাসময়ে জমা দেওয়া হবে। নাম-পদবী প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির সদস্য জানান, ১৯ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী তদন্ত অনুষ্ঠানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available