জ. ই বুলবুল: আগামী কাল বোরবার ২৫ জুন থেকে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় লক্ষাধিক লোক হজ এবং ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব যান। তবে, এবার হজে নানা খরচ বেড়ে যাওয়ায় কিছু হাজী হজে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। ইতোমধ্যে অধিকাংশ লোক মক্কা ও মদীনায় হজ করতে সমবেত হয়ে গেছেন। এদের অধিকাংশই প্রবীণ।
সৌদি আরবের আবহাওয়া আমাদের দেশের থেকে ভিন্ন। বর্তমানে হজ মৌসুমে সৌদি আরবে প্রচণ্ড গরম ও শুষ্ক। এই সময়টায় অনেকেই বিশেষ করে যারা বয়সে প্রবীণ তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে হজের নিয়মকানুন মেনে হজ সমাপন অনেকটাই কঠিন ও কষ্টকর হয়ে যায়।
কিছু সাবধানতা ও কিছু পূর্ব প্রস্তুতি থাকলে অনেক সময় সাময়িক এই অসুস্থতা এড়িয়ে চলা সম্ভব। পূর্ব প্রস্তুতি বলতে হজে যাওয়ার আগে কিছু কাজ করণীয় এবং কিছু সাবধানতা প্রয়োজন সৌদি আরবে অবস্থানকালীন।
পূর্ব প্রস্তুতি শুরু করতে হবে যখন হজ নিবন্ধন সমাপ্ত হয় তখন থেকেই। যাদের আগে থেকে অসুস্থতা আছে যেমন: হার্টের সমস্যা, কিডনি, লিভার, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন, তাদের উচিৎ চিকিৎসকের কাছে থেকে চেকআপ করিয়ে নেয়া। প্রেসক্রিপশন স্বযত্নে সংরক্ষণ করা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখা। সম্ভব হলে আপনার চিকিৎসকের সাথে প্রয়োজনে যোগাযোগ করা। চিকিৎসকের এমন একটা নাম্বার নিয়ে রারেন, যেন বিশেষ প্রয়োজন হলে অনলাইনে একটু কথা বলা যায়। ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মেডিক্যাল টিমের সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতে হবে।
ডায়াবেটিক রোগীদের অবশ্যই সাথে গ্লুকোমিটার রাখতে হবে। যাতে নিজেই সুগার টেস্ট করতে পারেন। শ্বাস কষ্টের রোগীদের অবশ্যই ইনহেলার সাথে রাখতে হবে। যদি আগে কখনো ইনহেলার ব্যবহার করে থাকেন। যাদের মেরুদণ্ডে বা ঘাড়ে ব্যথা আছে তারা অবশ্যই সাবধানে থাকবেন চলাফেরায় এবং বোঝা ব্যাগ ইত্যাদি বহন করার সময়। ব্যাগ যথাসম্ভব হালকা রাখবেন । প্রয়োজনে সাথীদের সাহায্য নিবেন। হঠাৎ করে ভারি ব্যাগ তুলতে যাবেন না।
যাদের চোখে পাওয়ারের সমস্যা তারা একবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে নতুন করে চশমা বানিয়ে নেয়া উচিৎ । একটা অতিরিক্ত চশমা ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখুন। চশমার পাওয়ারের কাগজটা সাথে রাখতে ভুলবেন না।
দেশ ত্যাগ করার আগে হজ চলাকালীন প্রয়োজন হতে পারে এমন একটা সম্ভাব্য ওষুধের তালিকা করে ওষুধগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখুন। তার মধ্যে ঠাণ্ডা কাশির জন্য এন্টিহিস্টাসিন জাতীয় ট্যাবলেট, পাতলা পায়খানার জন্য খাবার সেলাইন ও মেট্রোনিডাজল ও সিপ্রোসিন জাতীয় ট্যাবলেট, মাথা ব্যথার জন্য পেরাসিটামল ট্যাবলেট ইত্যাদি সাথে রাখতে হবে।
সৌদি আরবের আবহাওয়া বেশ শুষ্ক এবং প্রচণ্ড গরম। গরমে প্রথমেই যে সমস্যাটি হয় তা হলো পানি পিপাসা। অনেকেই আছেন অধিকতর তৃপ্তি পেতে একদম ঠাণ্ডা পানি পান করে থাকেন। ফলে অল্পতেই গলা বসে যায়। এর ফলে কাঁশি, এমনকি অনেক সময় জ্বর চলে আসে। এ থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
মক্কা মদিনা সব জায়গাতেই দুই ধরণের পানির ব্যবস্থা থাকে। একদম ঠাণ্ডা পানি পরিহার করা উচিত না। প্রয়োজনে ঠাণ্ডা এবং নরমাল পানি মিশিয়ে পান করতে পারেন। সারা দিনই কমবেশি পানি খেতে হবে। প্রস্রাব হলুদ হলে বুঝবেন দেহে পানি শূন্যতা চলছে। পানি এবং ফলমূল বেশি করে খেতে হবে।
হাজীদের জন্য অনেকেই খাবার ফ্রিতে সরবরাহ করে থাকেন। এগুলো বেশির ভাগ সময় বেশ তৈলাক্ত হয়ে থাকে। হঠাৎ করে বেশি খেলে অনেকেরই সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের পেটের সমস্যা বিদ্যমান। তাদের জন্য এসব তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা উচিত। খেলেও পরিমাণে কম খেতে হবে। খেজুরের বেলায়ও অনেকেরই সমস্যা হয়। খেজুর খেতে হলেও অল্প পরিমাণে এবং ভালো করে ধুয়ে খাবেন। তাহলে আশা করা যায় পেটের সমস্যা হবে না।
যাদের ডায়বেটিস আছে, তারা অবশ্যই কোমল পানিয় পরিহার করে চলবেন। হাইপো হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে অবশ্যই সাথে চকলেট জাতীয় কিছু রাখবেন। অনেকই আছেন তারা অধিকতর সোয়াবের আশায় মক্কায় পৌঁছার পর হজের মৌলিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি দিনরাত তাওয়াফ ও মসজিদে সময় কাঠানোর চেষ্টা করে থাকেন।
আবার অনেকেই বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে অসুবিধার কিছু নেই। তবে মনে রাখতে হবে হজের মৌলিক অত্যাবশ্যকীয় কাজগুলো যেমন: ফরজ তাওয়াফ, আরাফায় অবস্থান, মুজদালিফা ও মিনাতে অবস্থান ও কঙ্কর নিক্ষেপ ইত্যাদির জন্য সুস্থতা খুবই জরুরি। বিদায়ী তোয়াফ পর্যন্ত সুস্থতা খুবই প্রয়োজন।
যারা শারীরিকভাবে দুর্বল এবং বয়স্ক তাদের যথাসম্ভব দিনের গরম ও রোদ পরিহার করে চলা ভালো। প্রয়োজনে তোয়াফের কাজ রাতের বেলায় নিরাপদ। যারা হেরেম শরীফের দূরবর্তী আবাসনে থাকেন, তাদের পক্ষে বারবার হেরেম শরীফে আসাটা কষ্টকর হবে। সে ক্ষেত্রে দিনের দুই প্রান্তে হেরেম শরীফে নামাজ আদায় করলে কিছুটা স্বস্তিকর হবে।
হজকে সামনে রেখে দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করতে হলে সাবধানে করতে হবে। পাহাড়ে উঠানামা করতে গিয়ে পায়ের গোড়ালি মচকে যেতে পারে। সে অবস্থায় হজ তার জন্য বেশ কঠিন হয়ে যাবে। এমন হলে অপেক্ষা না করে দ্রুত মেডিক্যাল টিমের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘুমের ব্যাপারে খুব যত্ন নিতে হবে। এই সময়টায় ওয়াক্তের নামাজ, তোয়াফ, তাহাজ্জুদের নামাজ ইত্যাদি করতে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই ঘুমের সময় নিয়ে বেশ ঝামেলায় থাকেন। আবার অনেকেই অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় প্রচুর সময় ব্যয় করেন। মনে রাখতে হবে সুস্থতার অন্যতম নিয়ামক হলো ঘুম। সবচেয়ে ভালো হয় ফজরের নামাজ শেষে নাস্তা করে লম্বা ঘুম দিতে পারেন।
ঘুম থেকে উঠে জোহরের নামাজ। তোয়াফের কাজটা সেরে ফেলতে হবে এশার নামাজ শেষে অথবা ফজর ওয়াক্তে। এশার নামাজ শেষে খাওয়া দাওয়া শেষে মার্কেটে ঘুরতে বের হওয়ার চেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে শরীর মন দুটিই ভালো থাকবে। হজের মূল পর্ব সামনে রেখে নিজেকে যত সামলে চলা যায় ততই ভালো।
মনে রাখতে হবে আপনি আল্লাহর মেহমান হয়ে হজ পালন করতে গেছেন। তাই এই সময়টাতে দুনিয়াবি সকল চিন্তা বাদ রাখতে হবে। আগে থেকেই হজের মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে । পরে এসে আফসোস করতে যেনো না হয়। কোরবানি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যাতে নিয়মের কোন ত্রুটি না হয়।
মোয়াল্লেম /গাইড তারা কোরবানি করে দিবে এমন বলে তারা সহি-শুদ্ধভাবে করে করে না। কোরবানি করে তার পরে মাথা চুল কাটটে হবে। কিন্তু সঠিক তথ্য না জেনে অনেকেই নিজের চুল কেটে ফেলে। হজের ফরজ কোনও ভাবেই যেন ছুটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিটি স্তরে সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা যেন সবাইকে হজ-উমরাহ্ পালনের তৌফিক দান করেন। আমিন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available