নরসিংদী প্রতিনিধি: এ যেন সিনেমার কাহিনিকে ও হার মানিয়েছে শ্যামল মিয়ার অভিনয়। হত্যা মামলার আসামি ছিলেন জামিন নিয়ে বের হওয়ার পর তার পাত্তা পায়নি আদালত। অবশেষে হাজির হন লাশ হয়ে, দেখানো হয় তিনি মারা গেছেন। বিষয়টি বিশ্বাস করেন, আদালত পেয়েও যান খালাস। কিন্তু অপর এক মামলায় সেই মৃত শ্যামল মিয়া গ্রেপ্তার হয়েছেন এতে আদালতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
২০০৬ সালের ১৬ মার্চ কমলা বানু নামে এক নারী খুন হন। এই অভিযোগে মনোহরদী থানায় তার ভাই আব্দুল বাতেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় উপজেলার খালিয়া বাইদ গ্রামের লিয়াকত আলির ছেলে শ্যামল ও নিহত কমলা বানুর ছেলে শরীফ মিয়াকে অভিযুক্ত করে পুলিশ চার্জশিট প্রদান করেন। পরে মামলাটি বিচারের জন্য নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে শুনানি হয় । আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এরপর পুলিশ শ্যামল ও শরীফকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। পরে শ্যামল আদালত থেকে জামিন নিয়ে আর আদালতে হাজির হননি। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে শ্যামলকে মৃত দেখানো হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ১৬ মার্চ কমলা বানু নামে এক নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। কমলা বানু হত্যার অভিযোগে মনোহরদী থানায় তার পরে চলতি বছরের ২০ মার্চ নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আদেশ হয়, মামলার ১নং আসামি শরীফ মিয়া (২৫) র বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে আনীত অভিযোগ সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিকে আনিত অভিযোগের দায় হতে বেকসুর খালাস প্রদান করা হলো। আসামি মৃত্যুবরণ করায় তাকে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
এ মামলার রায় নিয়ে বিপত্তি ঘটে তখন, যখন অন্য একটি মামলায় ২৬ অক্টোবর মনোহরদী থানা পুলিশ শ্যামলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে। আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। সম্পূর্ণ বিষয়টি ২৭ নভেম্বর লুকো মুখেও কোট প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়াতে থাকে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শ্যামলের মা দেলোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে মৃত দেখিয়ে কেন খালাস দেয়া হবে। আমার ছেলে কী মৃত! আমার ছিল জীবিত। এটা শত্রুতামি করে করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা এত কিছু জানি না।
নরসিংদী জজ কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, আদালতে বেঞ্চসহকারীর সাথে যোগাযোগ করে শ্যামলের নথিসহ তার মৃত্যু সনদ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, নথিতে অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে, তবে মৃত্যুসনদ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র নেই। শ্যামল যে মারা যায়নি সেটি প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তাকে মৃত্যুর কথা বলে খালাস দেওয়া হয়েছিল। সম্পূর্ণটাই ছিল সাজানো-গোছানো একটি নাটকের মতো। যা এখন স্পষ্ট।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুয়েল হোসেন বলেন, চলমান একটি মামলায় শ্যামলকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৩টি মামলা রয়েছে, সে জীবিত।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available